পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু y)& পেছনে আর একদল এসে ঘরের বাইরে অপেক্ষা করছে, এরা না বেফলে তার ঢুকতে পারে না। এরা তো প্রত্যেকে এক-একটা তোড়া দিয়ে গেল—দুটি মেয়ে আবার দুটি বেলের গোড়ে বৃদ্ধের গলায় নিজের পরিয়ে দিলে-বৃদ্ধ কি একটা ঠাট্টাও করলেন। আমার তখন শোনবার মতে অবস্থা ছিল না। তারা ঘর থেকে বা’র হয়ে গেলে বৃদ্ধ বললে-এই আমার বড ছেলে তারক, আলিপুরে প্র্যাকটিস করে, বালিগঞ্জে বাড়ী করেছে, সেখানেই থাকে। পিছনের দলটির মধ্যে মহিলা নেই—তিনটি ছোকরা, বয়সে ষোল থেকে একুশ, এরা এসে কিছু দিলে না, একজন অটোগ্রাফের থাত বার করে বললে—জোঠামশায়, আমার খাতায় আজকের দিনে কিছু লিখে দিন। অটোগ্রাফের পাতা ফেরত দিতে না দিতে আর দুটি ছেলে, তাদের সঙ্গে বারো তেরো বছরের একটি বেণী-দোলানো মেয়ে । তারপরে ব্যাপারটা গণনার বাইরে চলে গেল । কত ছেলে-মেয়ে, তরুণ-তরুণী, প্রৌঢ়-প্রৌঢ় যে ঘরটায় ঢুকতে বেরুতে লাগল, আমার আর তাদের হিসেব রাখা সম্ভব হ’ল না । ফুলে ফুলে তক্তাপোশটা ছেয়ে গেল, ফুলের তোড়া ক্রমশ উচু হয়ে উঠতে লাগল—আর সেখানে জায়গা দেওয়া যায় না। আর এরা সবাই আত্মীয় আত্মীয়া, বাইরের লোক কেউ নেই। সব আপনা-আপনির মধ্যে, পুত্র-কন্তী, পৌত্র-পৌত্রী দৌহিত্র-দৌহিত্র, জামাই, ভ্রাতৃবধু, ভ্রাতুষ্পত্র, ভ্রাতুপুত্রী—ইত্যাদি ইত্যাদি। ভদ্রলোক ভাগ্যবান, এদের মতো লোকের সাহায্য না পেলে প্রজাপতির স্বষ্টি রক্ষা অসম্ভব হয়ে উঠত। ক্রমশ ভিড় বাড়চে দেখে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে পডলুম, আমি তখন ইপিয়ে উঠেছি ভদ্রলোকও গোলমালের মধ্যে আমাকে তখন ভুলে গিয়েছেন। আমি তখন বাড়ীর বাইরে এসে ইপি, ছেডে বাচি। বাড়ীর সামনের গলিতে সারিবদী মোটর দাড়ানে—সেখানে ধরেনি। গলি ছাপিয়ে মোটরের সংরি বড় রাস্তায় এসে পৌছেচে, বিয়ে বাড়ীতেও এত মোটর জমে কি-না সন্দেহ । গলি পার হয়েই বড় রাস্তার মোড়ে নিবারণ মিত্রের সঙ্গে দেখা—সে আমার পরিচিত বন্ধু, সেজেগুজে সিস্কের পাঞ্জাৰি শুড়ওয়াল নাগরা পরে তাকে ব্যস্তসমস্ত ভাবে গলিতে ঢুকতে উদ্যত দেখে বললুম, ওহে, তুমিও কি বিশ্বনাথবাবুর বাড়ী যাচ্ছে না কি ? —ই্যা। কেন বলত ? তুমি বিশ্বনাথবাবুকে চিনলে কি করে ? —এতক্ষণ সেখানে বসেছিলুম ভাই, দেখে শুনে মাথা ঘুরে উঠিল। শহরের এক-তৃতীয়াংশ লোক দেখলুম বিশ্বনাথবাবুর আত্মীয়-আত্মীয়া, আর তারা সবাই এসেছেন ওই সাতত্তির বছরের বুড়োর জন্মদিনে ফুলের তোড়া উপহার দিতে। তোমার তোড়া কই ? বন্ধু হেসে বললে—খুব আশ্চৰ্য্য লাগছে ? বিশ্বনাথবাবুর সাত ছেলে চার মেয়ে। এদের সকলেরই আবার ছেলেমেয়ে এবং অনেকেরই নাতি নাতনী, নাতজামাই ইত্যাদি হ’য়ে . গিয়েছে। বিশ্বনাথবাবুর তিন ভাই। তাদের ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনী আছে। হিসেব ক'রে থাখে কত হয়—এবং আসল কথা কি জানো, বুড়োর হাতে হাজার পঞ্চাশ বাট টাকা -ছে, সকলেরই চোখ সেদিকে একথা যদি বলি, তবে সেটা খুব খারাপ শোনাবে হয়তো । কিন্তু কথাটা মনে না উঠে কি পারে ? তুমিই বলে। আচ্ছা, আসি ভাই, দেরি হয়ে যাচ্ছে।