পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২২ বিভূতি-রচনাবলী এই সময়ে আমার ছোট ভাগ্নে স্কুল হইতে ফিরিল। টিফিনের ছুটি হুইয়াছে, সে সকালে খাইতে যাইতে পারে নাই বলিয়া ভাত খাইতে আসিয়াছে । —ও টুলু, চিনতে পার তোমার সই-মারে ? হি হি, ও মা ছেলে এর মধ্যে কত বড় হয়ে গিয়েচে মাথায় । গায়ে এটা কি, জামা ? বেশ জামাটা । আমার ভাগিনেয় এই বয়সেই একটু চালবাজ। গ্রাম হইতে আগত এই সই-মাকে দেখিয়া সে যে খুব খুশি হইয়া উঠিয়াছে, এমন কোন লক্ষণ তাহার ব্যবহারে প্রকাশ পাইল না। তাহার সই-মা বলিল, বেশ জামাটা টুলুর গায়ে । টুলুর আর কোন ছেড়া-কাট জামা-টাম নেই, হ্যা সই ? ছেলেড এই শীতি আদুড় গায়ে থাকে। তোমার সয়৷ এবার অমুখে পড়ে গাছ কাটতে পারে নি। মোটে দশটা গাছে যা রস হয়, তাই জাল দিয়ে সের আড়াই পাটালি হয়। হাটরা হাটে পাটালির দর নেই, তার ওপর ছ। পয়সা আট পয়সা সের। ওই থেকে চাল ডাল, ওই থেকে সব। গাছের আবার খাজনা আছে। ছেলেডাকে একখানা দোলাই কিনে দেব দেব ভাবচি আজ তিন হাটে, কোথা থে দেই বল দিকিন সই ? কি রে—কি ? হু, উ উ ? ছেলের আবার আবদার দেখ না ? আমার বোন বলিল, কি বলচে হাবুল ? —ওর কথা বাদ দ্যাও সই। রাস্ত দিয়ে ওই যে মিন্সে চিনির কি বলে ও-গুলো— হাৰুল বলিল—গোলাপছডি । —তা যে ছড়িই হোক, ওই ওঁকে কিনে ‘দিতে হবে। না, ও খায় না । কি ছড়ি ? গোলাপছড়ি ? হি হি, নাম দেথ না ?–গোলাপছড়ি । আমার ভাগ্লের দৃষ্টিও বোধ হয় ইতিমধ্যে গোলাপছডির দিকে পড়িয়াছিল। সে ছুটির গিয়া ফিরিওয়ালাকে ডাকিয়া আনিল ও আমায় সটান আসিয়া বলিল-গোলাপছড়ি কিনব, মামা । পয়সা দাও । বোধ হইল হাবুলও কিছু ভাগ পাইয়াছে, কারণ একটু পরেই হাবুলের মায়ের খুশিভর গলার স্বর শুনিতে পাইলাম—ন্তাও, হ’ল তো ? কেমন, বেশ মিষ্টি ? খাও। পাটালির চেয়ে কি বেশি মিষ্টি ? দেখি দে তো একটু গালে দিয়ে ? কি জানি, এসব কখনও দেখিও নি চক্ষে। একটু পরে টুলুকে ভাত দিতে তাহার মা রান্নাঘরে চলিয়া গেল। সেই সময়ে শুনিলাম, হাবুল নাকিমুরে বলিতেছে, ন, মা, স্থ। আর তোমারে দেব না। আমি তবে কি খাব ? হাবুলের মা তাহার সইকে আর পাইল না, কারণ ছেলেকে খাওয়াইয়া স্কুলে পাঠাইয়া দিয়া নিজে ঘরের মধ্যে বিছানার শুইয়। পড়িয়াছে। অস্থপস্থিত সইরের উদেখে হাবুলের মা আপন মনে অনেক গল্প করিয়া গেল। পানিক পয়ে শুনিলাম বলিতেছে—৪ই সই, ক'নে গেলে ? ঘুমূলে না কি ? মোরে আর একটা পান দেব না ? কেহ তাহার কথার উত্তর দিল না । বেলা তিনটা বাজিয়াছে। আমি বেড়াইতে বাহির হইতে গিয়া দেখি অতি মলিন শাড়ি