পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>b" বিভূতি-রচনাবলী ধারে চাহিয়া সেই নীরব নিশীথরাত্রে জ্যোৎস্নাভরা আকাশতলে দাডাইয়া মনে হইল এক অজানা পরীরাজ্যে আসিয়া পডিয়াছি—মানুষের কোন নিয়ম এখানে খাটিবে না । এই সব জনহীন স্থান গভীর রাত্রে জ্যোৎস্নালোকে পরীদের বিচরণভূমিতে পরিণত হয়, আমি অনধিকার প্রবেশ করিয়া ভাল করি নাই । তাহার পর ফুলকিয়া বইহারের জ্যোৎস্নারাত্রি কতবার দেখিয়াছি—ফাস্তনের মাঝামাঝি যখন দুধ লি ফুল ফুটিয়া সমস্ত প্রান্তরে যেন রঙীন ফুলের গালিচা বিছাইয়া দেয়, তখন কত জ্যোৎস্নাশুভ্র রাত্রে বাতাসে দুধ লি ফুলের মিষ্ট সুবাস প্রাণ ভরিয়া আভ্রাণ করিয়াছি—প্রত্যেক বারেই মনে হইয়াছে জ্যোৎস্না যে এত অপরূপ হইতে পারে, মনে এমন ভয়মিশ্রিত উদাস ভাব আনিতে পারে, বাংলা দেশে থাকিতে তাহা তো কোনদিন ভাবিও নাই! ফুলকিয়ার সে জ্যোৎস্না রাত্রির বর্ণনা দিবার চেষ্টা করিব না, সেরূপ সৌন্দৰ্য্যালোকের সহিত প্রত্যক্ষ পরিচয় যতদিন না হয় ততদিন শুধু কানে শুনিয়া বা লেখা পডিয়া তাহ উপলব্ধি করা যাইবে না— করা সম্ভব নয়। অমন মুক্ত আকাশ, আমন নিস্তব্ধতা, অমন নির্জনতা, অমন দিগ দিগন্তবিসর্পিত বনানীব মধ্যেই শুধু অমনতর রূপলোক ফুটির উঠে। জীবনে একবারও সে জ্যোৎস্নারাত্রি দেখা উচিত ; যে না দেখিয়াছে, ভগবানের স্বষ্টির একটি অপূৰ্ব্ব রূপ তাহার নিকট চির-অপরিচিত রহিয়া গেল। 6: একদিন ডিহি আজামাবাদের সার্ভে-ক্যাম্প হইঙে ফিরিবার সময় সন্ধ্যার মুখে বনের মধ্যে পথ হারাইয়া ফেলিলাম। বনের ভূমি সৰ্ব্বত্র সমতল নয়, কোথাও উচু জঙ্গলাবৃত বালিয়াডি টিলা, তার পরই দুটি টিলার মধ্যবৰ্ত্তী ছোটখাট উপত্যক। জঙ্গলের কিন্তু কোথাও কোন বিরাম নাই—টিলার মাথায় উঠিয়া চারিদিকে চাহিয়া দেখিলাম যদি কোন দিকে কাছারির মহাবীরের ধ্বজার আলো দেখা যায়—কোন দিকে আলোর চিহ্নও নাই—শুধু উচুনীচু টিলা ও ঝাউবন আর কাশবন—মাঝে মাঝে শাল ও আসান গাছের বনও আছে। দুই ঘণ্টা ঘুরিয়াও যখন জঙ্গলের কুলকিনারা পাইলাম না, তখন হঠাৎ মনে পডিল নক্ষত্র দেখিয়া দিক ঠিক করি না কেন। গ্রীষ্মকাল, কালপুরুষ দেখি প্রায় মাথার উপর রহিয়াছে। বুঝিতে পারিলাম না কোনদিক হইতে আসিয়া কালপুরুষ মাথাব উপর উঠিয়াছে—সপ্তর্ষিমণ্ডল খুজিয়া পাইলাম না। সুতরাং নক্ষত্রের সাহায্যে দিক-নিরূপণের আশা পরিত্যাগ করিয়া ঘোডকে ইচ্ছামত ছাডিয়া দিলাম। মাইল দুই গিয়া জঙ্গলের মধ্যে একটা আলো দেখা গেল। আলো লক্ষ্য করিয়া সেখানে উপস্থিত হইয়া দেখিলাম, জঙ্গলের মধ্যে কুডি বর্গহাত আন্দাজ পরিষ্কার স্থানে একটা খুব নীচু ঘাসের খুপরি । কুঁডের সামনে গ্রীষ্মের দিনেও আগুন জালানো। আগুনের নিকট হইতে একটু দূরে একটা লোক বসিয়া কি করিতেছে।