পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లశి8 বিভূতি-রচনাবলী কি খবর রাখি। ফেরারী আসামী তো হরদম পালিয়ে এসে আডড নিচ্ছে আমাদের এলাকায় । একবার তো মুরশিদাবাদ জেলা থেকে-কে কণর মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে এসে লুকিয়ে রইল থানারই পাশে আমাদের নাকের কাছে—এক খোলার ঘরে। তা ছাড়া বে-আইনী কোকেন, গুম, টাকা জাল, চোরাই মালের ব্যবসা, গুণ্ডামি প্রভৃতি প্রত্যেক হাঙ্গামার সঙ্গেই কি আলমপুর থানার এলাকাভুক্ত বাগান-বাড়ী ও বস্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ?.. অনুসন্ধান করলে দেখা যায়—শতকরা নব্বইটা হয় সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, নয়ত আলমপুর থানার ত্রিসীমানার উক্ত ছৰ্বত্তের দল কখনো পদার্পণ করে নি, তবুও কলকাতা পুলিশের এনকোয়ারীর স্লিপের ভিড়ে আমাদের প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠত ! একদিন দুপুরের পর তেমন কাজকৰ্ম্ম নেই, আমি রোদ পিঠে করে বসে খবরের কাগজ পড়ছি, শীতকাল—এমন সময় গভীর শব্দে মুখ তুলে চেয়ে দেখি–একখানা সেকেণ্ড ক্লাশ গাড়ী থেকে একজন স্ত্রীলোক থানার সামনেই নামছেন। তিনি থানার মধ্যে ঢুকে, আমাকে সামনে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-- —দারোগীবাবু কোথায় ? —বলুন-আমিই। তখন তিনি একখানা খামের চিঠি আমার হাতে দিলেন। খাম খুলে চিঠিখানায় একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে স্ত্রীলোকটিকে বসতে বললুম। চিঠি লিখছেন নারী-কল্যাণ-আশ্রমের বিখ্যাত কক্ষ্মী শ্ৰীযুক্ত যোগেশ চক্রবর্তী। যোগেশবাবু আমার পরিচিত পুরাতন বন্ধুও বটে, র্তার দ্বারা স্ত্রীলোকঘটিত নানা ঘটনার পুলিশের অনেক উপকারও হয়েছে বটে। তার বৰ্ত্তমান পত্রে বিশেষ কিছু লেখা নেই, মাত্র এইটুকু যে, যিনি এই পত্র নিয়ে যাচ্ছেন, তিনি যোগেশবাবুর পরিচিত ; তার বক্তব্য কি, তা শুনে আমি যদি তাকে সাহায্য করি,—তবে ভালো হয় । আমরা পুলিশের লোক-কাউকে বিশ্বাস করা আমাদের অভ্যাস নয়! মানুষের চরিত্রের খারাপ দিকটা এত দেখেছি যে—এতে আমাদের দোষ দেওয়া খুব বেশি চলে না। স্ত্রীলোকটিকে একবার ভালো ক'রে চেয়ে দেখে নিয়ে মনে হ’ল তার বয়স চল্লিশের মধ্যে হবে। এক সময়ে খুব রূপসী ছিলেন। খুব সরল চরিত্রের মেয়ে নয়—একটু খেলোয়াড় ধরনের। অবস্থাও খুব ভালো নয়। জিজ্ঞেস করলুম-আপনি কি চান ? তিনি উত্তরে যা বললেন, সংক্ষেপে তার মৰ্ম্ম এই যে—এখানকার কোন কালী-মন্দিরের পূজারীর সঙ্গে তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের সময় তার অবস্থা খুব ভালো ছিল না বলেই ওরকম পাত্রে মেয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। মেয়েটি বড়ই কষ্টে আছেন। তিনি বর্তমানে মেয়েকে এখান থেকে নিয়ে যেতে চান—তার নিজের কাছে। যোগেশবাবুর সাহায্যে মেয়েটিকে কোথাও লেখাপড় কি নাসের কাজ শেখাবার ব্যবস্থাও করতে পারেন ; মোটের উপর মেয়েকে তিনি এখানে রাখতে রাজী নন, এ বিষয়ে জামাকে তার সাহায্য করতে হৰে ।