পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু ৩২৫ এত সংক্ষেপে তিনি কথাটা আমায় বলেন নি! স্ত্রীলোকটির কথার বাধুনি খুব। তার নিজের জীবনের ইতিহাসও কিছু কিছু ওই সঙ্গে আমায় শুনে যেতে হ’ল। তার মধ্যে দুটো কথা প্রধান । এক সমরে তার স্বামীর কত টাকা ছিল এবং তিনিও দেখতে এর চেয়ে অনেক ভালো ছিলেন । আমি বললুম–পুলিশের সাহায্য চান কেন ? আপনি নিজেই কেন গিয়ে জামাইকে বলুন না ? তিনি বললেন—অনেকবার বলেছি, জামাই শোনে না, মেয়ে পাঠাবার মত নেই, অথচ তার দুর্দশার একশেষ করছে। আপনি নিজের চোখে গিয়ে দেখলেই সব বুঝবেন । আমি মেয়েমানুষ, আমার কোনো জোর খাটবে না তো, আমার সহায় নেই, সম্পত্তি নেই, কে আমার পক্ষ হয়ে দুটাে কথা বলবে? তাই যোগেশবাবুকে ধরে আপনার কাছে আসা। আমি বললুম—দেখুন, এতে পুলিশের কিছু করবার নেই। বিবাহিত স্ত্রীকে রাখবার সম্পূর্ণ অধিকার আছে স্বামীর। আপনার জামাই যদি মেয়েকে না আপনার সঙ্গে দেন, আমরা তাতে কি করব ?—আপনাব মেয়ের মত কি ? স্ত্রীলোকটি একটু ইতস্তত করে বললেন—মেয়েরও মত নয় এখানে থাকা। তারপরে কাদো কাদে স্বরে বললেন— আমার এই উপকারটুকু করুন আপনি । মেয়েকে আমি নিয়ে যাবই। তার কষ্ট আর দেখতে পারিনে। আপনি একটু সহায় না হলে—আমার আর কোনো উপায় নেই—এটুকু দয়া করে, আপনাকে করতেই হবে । মার খেরে খেয়ে তার শৰীরে আর কিছু নেই। স্ত্রীলোকটির কথার বাধুনি আমার ভালো লাগল না। অনেক রকম লোক দেখেছি মশাই, ভালো-মন্দ সব রকম দেখে যদি একটু সিনিক হয়ে থাকি, তার জন্তে আমাদের বেশী দোষী ঠাওরাবেন না। শেষ পৰ্য্যস্ত কতকটা উপরোধে পডে—কতকটা কৌতুহলের বশবৰ্ত্তী হয়ে গেলাম সেই কালীবাড়ী । কিন্তু স্ত্রীলোকটিকে থানায় বসিয়ে রেখে গেলাম। কালী-মন্দিরের কাছেই ছোট একতলা ঘরের একটা কুঠুরীতে পূজারী-ঠাকুর থাকে, সন্ধান নিলাম। পূজারীকে খুঁজে বার করতে বেগ পেতে হ’ল না। বছর পয়ত্রিশ বয়েস, একহারা পাকশিটে চেহারা । এই বয়সেই চুলে বেশ পাক ধরেছে, খেই মনে হ’ল-নেশাখের লোক। ধড়িবাজও বটে। তাকে সব খুলে বললাম। পুলিশ দেখে সে জড়সড় হয়ে গিয়েছে। কাচু-মাচু ভাবে বললে—“আঞ্জে বাড়ীতে যদি আপত্তি না করে, আপনি গিয়ে শ্বাশুড়ী ঠাকরুণকে নিয়ে আমুন আমি পাঠিয়ে দেব। যদি সত্যি কথা জিজ্ঞেস করেম দারোগাবাৰু, আমার মোটেই আপত্তি নেই। একটা পেট আমার, যে-কোনো রকমে চালিয়ে নেব। বেশ, আপনি চলুন আমার বাসায়। আমার স্ত্রীকে বলুন-আমি সেখানে থাকব না।" এর পরে আমার এমন একটা অভিজ্ঞতা হ’ল, বা অতদিনের পুলিশ-জীবনে কখনো হয়নি।