পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু శ్రీళలి —কলকাতা দেখেছ পাৰু ? —না, কে নিয়ে যাবে ? —আচ্ছা, এবার আমি যখন যাব এখান থেকে, নিয়ে যাব সঙ্গে ক’রে । বেশ আমাদের বাড়ী গিয়ে থাকবে, কেমন তো ? —কবে যাবেন খুড়ীম ? শ্রাবণ মাসে ? না, এখন কিছুদিন থাকুন। এখানে । যাবেন না এখন । —কেন বল তো ? হাসিয়া তাহার মুখের দিকে না চাহিয়া বলিলাম-আপনি থাকলে বেশ লাগে। নতুন বামুন হইয়াছি। তখনও একাদশী ছাড়ি নাই, যদিও এক বৎসরের বেশি উপনয়ন হইয়। গিয়াছে। প্রত্যেক একাদশীতে খুড়ীমা নিমন্ত্ৰণ করিয়া আমার খাওয়াইতেন । নিজের হাতে আমার জন্য খাবার করিয়া রাখেন, কোনদিন মোহনভোগ, কোনদিন নিমকি কি কচুরি, বৈকালে বেড়াইতে গেলে কাছে বসিয়া যত্ন করিয়া খাইতে দেন। অনেক রকম ত্রত করিতেন, তার ব্রতের বামুন আমিই। পৈতে ও পয়লা কত জমা হইয়া গেল আমার টিনের ছোট বাক্সটাতে । আমিও অবসর পাইলেই খুড়ীমার কাছে ছুটির যাইতাম, ছাদের কোণে বসিয়া কত আবোল-তাবোল বকিতাম তার সঙ্গে। বই পড়িয়া শোনাইতাম। খুড়ীমা বেশ ভালই লেখাপড়া জানিতেন, কিন্তু বলিতেন—পাবু, তুই পড়ে শোনা দিকি ? ভারি ভালো লাগে আমার তোর মুখে বই-পড়া শুনতে ! তোর গলার মুর ভারি মিষ্টি— আমাদের গ্রামে সে-বার নিমাই-সন্ন্যাস’ পালা হইয়াছিল বারোরারিতে। পালাটার মধ্যে বিষ্ণুপ্রিয়ার একট। গান চমৎকার লাগিয়াছিল বলিয়া শিখিয়া লইয়াছিলাম, এবং বেশ ভালো গাহিতে পারিতাম । নয়নে কখনো হেরিব না নাথ, দেখা হবে মনে মনে । আমার নিশীথ স্বপনে এলো এসো তজ্ঞ আবরণে । খুড়ীমা প্রায়ই বলিতেন—পাবু, সেই নানটা গাও তো ? গ্রামের লোকে অনেকে কিন্তু খুড়ীমাকে দেখিতে পারিত না । আমার কানেও এ-রকম কথা গিয়াছে । একবার রায়-বাড়ীর বড়গিল্পীকে বলিতে শুনিলাম—কি জানি বাপু জানি নে, ও সৰ কলকেতার কাও । সোয়ামী যার পাগলাগারদে, তার অত চুলবাধার ঘটাই বা কিসের, অভ পতাকাটার বাহারই বা কিসের, এত হাসিখুশিই বা আসে কোথা থেকে। কিবে চং, কিবে iাড়ির রং-ন বাপু, আমার তো ভালো লাগে না—তবে আমরা সেকেলে বুড়োহাবড়া, কলকেতার ফেশিয়ান তো জানি নি ?