পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७8२ বিভূতি-রচনাবলী কানুনগোর মুখের ভাবে ক্রমশ পরিবর্তন হতে লাগল, ঘুঘু লোক, বেশ বুঝলেন আমি চুরির মতলবেই সোনার ৰোতাম তোরঙ্গে রেখেছিলুম। এমন লোককে কে বাসার স্থান দেবে ? তিনি 'স্থ', 'ই', 'তা বটে’ বলতে বলতে সরে পড়লেন। চতুর্দিকে রাষ্ট্র হয়ে গেল, দু'একদিনের মধ্যেই, যে আমি মনিবের সোনার বোতাম .লুকিয়ে রেখেছিলুম, তাই ধরা পড়াতে মার খেয়েছি। আর আমার কেউ ভাঙচি দিতে আসে না । জেনে শুনে চোরকে কে কাছে রাখতে চায় ? মনির একদিন আমার বললে—এ কি শুনচি ? তুমি কানুনগো বাবুর কাছে বলেচ সোনার বোতাম লুকিয়ে রেখেছিলে বলে তোমায় মেরেছিলুম সেদিন ? কেন এ কথা বললে ? , বুললুম সব কথা খুলে। ওরা ভাঙচি দিতে আসে, বিরক্ত করে সর্বদ, না বলে উপায় কি ? ও কথা না বললে কি আমার নিস্তার ছিল ? মনিব বললে—তুমি অভূত লোক। এমন লোক আমি কখনো দেখিনি। আমায় ছেড়ে যেতে হবে বলে নিজের নামে নিজেই একটা মিথ্যে অপবাদ রটালে ? এ তো নিজের ভাই করে না, ছেলে করে না। তুমি রাধুনীর কাজ কোরো না, সাধারণ লোক নও তুমি। তোমাকে রাধুনী করে রেখে দিলে আমার অপরাধ হবে। তিনি যদিও সবাইকে বলে বেড়ালেন বোতাম চুরির কথা সৰ্ব্বৈব মিথ্যে, কিন্তু সে কথা কেউ বিশ্বাস করলে না। মনিবকে কত বোঝালুম, ছেড়ে যেতে চাইলুম না। তিনি হাতজোড় করে মাপ চাইলেন, বললেন—আমায় অপরাধী করে না, তুমি আমার রাধুনীর কাজ করবার লোক নও। যা হয়ে গিয়েচে তার চারা নেই—আর আমি সজ্ঞানে জেনে শুনে তোমায় দিয়ে চাকরের কাজ করাতে পারব না । * * সেখানে চাকরি তো গেলই, যদিও এদিকে মনিৰ সবাইকে বলে বেড়ালেন বোতাম চুরির কথা মিথ্যে, কেউ সে কথা বিশ্বাস করলে না। সবাই ভাবলে চুরির জন্তে আমার চাকরি গেল। মাসবার সময় মনিব তার ঘড়ি-চেন এবং পঞ্চাশটি টাকা দিয়েছিলেন। এই দেখুন সেই ঘড়ি-চেন। কিন্তু সেই থেকে মনে কেমন একটা কষ্ট হ’ল, পথে পথে বেড়াই। আর কারো বাড়ী রাধুনীর চাকরি নিইনি। নেবও না। অরন্ধনের নিমন্ত্রণ, এক একজন লোকের স্বভাব বড় খারাপ, বকুনি ভিন্ন তারা একদণ্ডও থাকতে পারে না, শ্ৰোতা পেলে বকে যাওয়াতেই তাদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ মুখ। হীরেন ছিল এই ধরনের মাজুৰ। তাঁর বকুনির জালায় সকলে অতিষ্ঠ। আফিসে যারা তার সহকী, শেষ পৰ্য্যন্ত