পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু oso তাদের অনেকের স্নায়ুর রোগ দেখা দিলে, অনেকে চাকরি ছাড়বার মতলব ধরলে। সব বিষয়ের প্রতিভার মতই বকুনির প্রতিভাও পৈতৃক শক্তির আবখ্যক রাখে। হীরেনের বাবার বকুনিই ছিল একটা রোগ। শেষ বয়সে তাকে ডাক্তারে বারণ করেছিল, তিনি বেশী কথা যেন না বলেন। তাতে তিনি জবাব দিয়েছিলেন—তবে বেঁচে লাভটা কি ডাক্তারবাৰু ? যদি দু’একটা কথাই কারে সঙ্গে বলতে না পারলুম ! কথা বলতে বলতেই হৃৎপিও দুর্বল হবার ফলে তিনি মারা যান-মার্টার টু দি কজ,! এ হেন বাপের ছেলে হীরেন। বাইশ বছরের যুবক—আপিলে কাজ করে—আবার . রামকৃষ্ণ মঠেও যাতায়াত করে। বিবাহ করবার ইচ্ছে নেই। শুনেছিলাম সন্ন্যাসী হয়ে যাবে। এতদিন হয়েও যেত, কিন্তু রামকৃষ্ণ আশ্রমের লোকেরা এ বিষয়ে তাকে বিশেষ উৎসাহ দেন নি ; হীরেন সন্ন্যাসী হয়ে দিন রাত মঠে থাকতে শুরু করলে এক মাসের মধ্যেই মঠ জনশূন্ত হয়ে পড়বে। হীরেনের এক বৃদ্ধ পিসিমা থাকতেন দূর পাড়াগারে। স্টেশন থেকে দশ-বারে ক্রোশ নেমে যেতে হয় এমন এক গ্রামে। পিসিমার আর কেউ নেই, হীরেন সেখানে পিসিমাকে একবার দেখতে গেল ! বুড়ী অনেকদিন থেকেই দুঃখ করে চিঠিপত্র লিখছিল। সে গ্রামের সবাই এতদিন জানতো যে, তাদের কুমী অর্থাৎ কুমুদিনীর মতো বকুনিতে ওস্তাদ মেয়ে সে অঞ্চলে নেই। কুমীর বাবা গ্রাম্য পুরোহিত ছিলেন–কিন্তু যেখানে যখন পুজো করতে যেতেন, আগডুম বাগডুম বকুনির জালায় যজমান ভিটে ছেড়ে পালাবার যোগাড় করতো, বিয়ের লগ্ন উত্তীর্ণ হবার উপক্রম হ’ত । কুমীর বাপের বকুনি-প্রতিভার একটা বড় দিক্ ছিল এই যে, তার বকুনির জন্ত কোনো বস্তুর প্রয়োজন হত না। ফন্ত তুচ্ছ বিষয়ই হোক না কেন, তিনি তাই অবলম্বন করে বিশাল বকুনির ইমারত গড়ে তুলতে পারতেন। মনে যথেষ্ট উৎসাহ ও শক্তি এবং সঙ্গে সঙ্গে অসাধারণ বলবার ও ছবি গড়বার ক্ষম গ না থাকলে মানুষে এমন বকতে পারে না বা শ্রোতাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। তার মৃত্যুর সময়ে গ্রামের সকলেই দুখ করে বলেছিল—আজ থেকে গা নিঝুম হয়ে গেল। দু’একজন বলেছিল—এবার আমসত্ত্ব সাবধানে রৌদ্রে দিও, মুখুয্যে মশার মারা গিয়েছেন, কাক-চিলের উৎপাত বাড়বে। অর্থাৎ তাদের মতে গায়ে এতদিন কাক-চিল-বসত্তে পারত না মুখুয্যে মশায়ের বকুনির চোটে। নিন্মুক লোক কোন জায়গায় নেই ? কিন্তু হায়! নিলুকের আশা পূর্ণ হয় নি বা মুখুয্যে মশায়ের হিতাকাজীদের দুঃখ করবারও কারণ ঘটে নি। মুখুয্যে মশার তার প্রতিনিধি রেখে গিয়েছিলেন তার আট . বৎসরের মেয়ে কুমীকে। পিতার ছন্নভ বাক-প্রতিভার অধিকারিণী হয়েছিল মেয়ে। এমন কি তার বয়েস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই সন্দেহ করলেন যে, মেয়ে তার বাপকে ছাড়িয়ে नीं क्षiश्च । সেই কুমীর বয়েল এখন তেরো চোদ। মুত্র, উজ্জল খামবর্ণ, কোকড় কোকড়া একরাশ