পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२ ० - বিভূতি-রচনাবলী আমাদের যখন এই ব্যবসা ! সেদিন তো রাত্রে আমার খুপ্ররির পেছনে বাঘ এসেছিল। মহিষের দুটো বাচ্চ আছে, ওদের ওপর তাক । শব্দ শুনে রাত্রে উঠে টিন বাজাই; মশাল জালি, চীৎকার করি! রাত্রে আর ঘুম হল না হুজুর ; শীতকালে তো সারারাত এই বনে ফেউ ডাকে। —থাও কি এখানে ? দোকান-টোকান তো নেই, জিনিসপত্র পাও কোথায় ? চাল ডাল— —হুজুর, দোকানে জিনিস কেনবার মত পয়সা কি আমাদের আছে, না আমরা বাঙালী বাবুদের মত ভাত খেতে পাই ? এই জঙ্গলের পেছনে আমার দু-বিঘে খেড়ী ক্ষেত আছে । খেড়ীর দানা সিদ্ধ, আর জঙ্গলে বাথুয়া শাক হয়, তাই সিদ্ধ, আর একটু লুন, এই খাই। ফাগুন মাসে জঙ্গলে গুড়মী ফল ফলে, লুন দিয়ে কাচ খেতে বেশ লাগে—লতানে গাছ, ছোট ছোট কাকুড়ের মত ফল হয় ; সে সময় এক মাস এ-অঞ্চলের যত গরীব লোক গুড়মী ফল খেয়ে কাটিয়ে দেয়। দলে দলে ছেলেমেয়ে আসবে জঙ্গলের গুড়মী তুলতে । জিজ্ঞাসা করিলাম—রোজ রোজ খেড়ীর দান সিদ্ধ আর বাথুয়া শাক ভাল লাগে ? —কি করব হুজুর, আমরা গরীব লোক, বাঙালী বাবুদের মত ভাত খেতে পাব কোথায় ? ভাত এ অঞ্চলের মধ্যে কেবল রাসবিহারী সিং আর নন্দলাল পাড়ে থায় দুবেলা । সারাদিন মহিষের পেছনে ভূতের মতন থাটি হুজুর, সন্ধের সময় ফিরি যখন, তখন এত ক্ষিদে পায় যে, যা পাই খেতে তাই ভাল লাগে । গকুকে বলিলাম—কলকাতা শহর দেখেছ গনু ? —ন হুজুর। কানে শুনেছি। ভাগলপুর শহরে একবার গিয়েছি, বড় ভারী শহর । ওখানে হাওয়ার গাড়ী দেখেছি, বড় তাজ্জব চিজ হুজুর । ঘোড়া নেই, কিছু নেই, আপনাআপনি রাস্ত দিয়া চলছে । এই বয়সে উহার স্বাস্থ্য দেখিয়া অবাক হইলাম। সাহসও যে আছে, ইহা মনে মনে স্বীকার করিতে হুইল । গকুর জীবিক নিৰ্ব্বাহের একমাত্র অবলম্বন মহিষ কয়টি । তাদের দুধ অবশ্য এ-জঙ্গলে কে কিনিবে, দুধ হইতে মাখন তুলিয়া ঘি করে ও দু-তিন মাসের ঘি একত্রে জমাইয়া ন-মাইল দূরবর্তী ধরমপুরেব বাজারে মাড়োয়ারীদের নিকট বিক্রয় করিয়া আসে। আর থাকিবার মধ্যে ওই দু-বিঘা খেড়ী অর্থাৎ শুমাঘাসের ক্ষেত, যার দানা সিদ্ধ এ-অঞ্চলের প্রায় সকল গরীব লোকেরই একটা প্রধান খাদ্য। গম্বু সে-রত্রে আমাকে কাছারিতে পৌছাইয়া দিল, কিন্তু গল্পকে আমার এত ভাল লাগিল যে, কত বার শান্ত বৈকালে তাহার খুপরির সামনে আগুন পোহাইতে পোহাইতে গল্প করিয়া কাটাইয়াছি। ওদেশের নানারূপ তথ্য গন্থর কাছে যেরূপ শুনিয়াছিলাম, অত কেউ দিতে পারে নাই । গহ্বর মুখে কত অদ্ভুত কথা শুনিতাম। উড়, ছেলের স্থাটির বেড়াইবার কথা, ইত্যাদি। ওই সি