পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wo&\s বিভূতি-রচনাবলী উঠানের একটা ধারে একটা নালা। হঠাৎ কুমী বললে—জ্যোৎস্ন রাতে এলে চুলে লাফিয়ে নালা পার হ'লে ভূতে পায়—আমার ভূতে পাবে দেখবে দাদা—হি-হ-হ-ছি— তারপর সে লাফালাফি ক'রে নালাটা বরকত্তক এপার-ওপার করচে, এমন সময় ওর মা ডাক দিলেনৃ—ও পোড়ামুখী মেয়ে, এই ভর সন্ধেবেলা তুমি ও করচ কি ? তোমার নিয়ে আমি যে কি করি ? ধিঙ্গী মেয়ে, এতটুকু কাণ্ডজ্ঞান যদি তোমার থাকে –হীরু ভালো মানুষের মতো মুখখানি ক’রে হারিকেন লণ্ঠনটা মুছে পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে উঠল। মায়ের পিছু পিছু কুমী চলে গেল, একটু অনিচ্ছার সঙ্গেই গেল, মুখে তার অপ্রতিভের হাসি ! হীরেন মনমরা ভাবে লন্ঠনের সামনে কি একখানা বই খুলে পড়তে বসবার চেষ্টা कब्रळ । মাসের পর মাস যায়, বছরও ঘুরে গেল। নতুন বছরের প্রথমে হীরেনের চাকুরিটা গেল, আপিসের অবস্থা ভালো নয় বলে। এই এক বছরের মধ্যে হীরেন পিলিমার বাড়ী আরও অন্ততঃ দশবার এল গেল এবং এই এক বছরের মধ্যে হীরেন বুঝেচে কুমীর মতো মেয়ে জগতে আর কোথাও নেই—বিধাতা একজন মাত্র কুমীকে স্বষ্টি করেচেন। কি বুদ্ধি, কি রূপ, কি কথাবাৰ্ত্তা বলবার ক্ষমতা, কি হাত নাড়ার ললিত ভঙ্গি, কি লঘুগতি চরণছন্দ। প্রস্তাবটা কে উঠিয়েছিল জানি নে, বোধ হয় হীরুর পিসিমাই। কিন্তু কুমুদিনীর জ্যাঠামশাই সে প্রস্তাবে রাজী হন নি—কারণ তারা কুলীন, হীরেনর বংশজ। কুলীন হয়ে বংশজের হাতে মেরে দেবেন তিনি, একথা ধারণ করাই তো অন্যায়। হীরু শুনে চটে গিয়ে পিসিমাকে বললে—কে তোমাকে বলেছিল পিসিমা ডেকে অপমান ঘরে আনতে ? আমি তোমার পারে ধরে সেধেছিলুম কুমীর সঙ্গে আমার বিয়ে দাও ? সবাই জানে আমি বিয়ে করব না, আমি রামকৃষ্ণ আশ্রমে ঢুকব। সব ঠিকঠাক হরে গিয়েচে, এবার এই ইয়েটা মিটে গেলেই— কুমীর কানে কথাটা গেল যে হীরু এই সব বলেচে । সে বললে—হীরুদাকে বিয়ে করতে আমি পারে ধরে সাধতে গিয়েছিলুম যে! বয়ে গেল—সন্ন্যাসী হবে তো আমার,কি ? হীর তল্পী বেঁধে পরদিনই পিলিমার বাড়ী থেকে নিজের বাড়ী চলে গেল। হীরুর বাড়ীর অবস্থা এমন কিছু ভালো নয়। এবার তার কাক আর মা একসঙ্গে বলতে শুরু করলেন—সে যেন একটা চাকুরির সন্ধান দেখে । বেকার অবস্থায় বাড়ী বসে কতদিন আর এভাবে চলবে ? হীরুর কাকার এক বন্ধু জামালপুরে রেলওয়ে কারখানার বড়বাবু, কাকার পত্র নিয়ে হীরু সেখানে গেল এবং মাস দুই তার বাসায় বসে খাওয়ার পরে কারখানার আপিলে ত্রিশ টাকা মাইনের একটা চাকুরি পেয়ে গেল । লাল টালি-ছাওয়া ছোট্ট কোয়ার্টারটি হীরুর। বেশ ঘর-দোর, বড় বড় জানালা । জানালা দিয়ে মারক পাহাড় দেখা যায় ; কাজকর্শ্বের অবসরে জানাল দিয়ে চাইলেই চোখে পড়ে