পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|రిdషి বিভূতি-রচনাবলী জামালপুরে যাতায়াত করে রোজ, মোটর এখনও করেনি—তবে বলতে শুরু করেচে মোটর না রাখলে আর চলে না ; ব্যবসা রাখতে গেলে ওটা নিতান্তই দরকার, বাৰুগিরির জন্তে নয়। হঠাৎ এই সময় দেশ থেকে পিসিমার চিঠি এল, তিনি আর বেশিদিন বাচবেন না ; বহুকাল হীরুকে দেখেন নি তিনি, তার বড় ইচ্ছে মুঙ্গেরে হীরুর কাছে কিছুদিন থাকেন ও দুবেলা গঙ্গাস্নান করেন । - স্বরমা বললে—আসতে যখন চাইচেন, নিয়ে এস গে—আমিও তাকে কখনও দেখিনি— আমরা ছাড়া আর তার অাছেই বা কে ? বুড়ে হয়েচেন—যে ক'দিন বাচেন এখানেই গঙ্গাতীরে থাকুন। বাসায় আর এমন কেউ ছিল না, যাকে পাঠানো যায় পিসিমাকে আনতে, কাজেই হীরই দেশে রওনা হলো । ভাদ্রমাস। দেশ এবার ভেসে গিয়েচে অতিবৃষ্টিতে। কোদলা নদীতে নৌকোয় ক’রে আসবার সময় দেখলে জল উঠে দুপাশের আউশ ধানের ক্ষেত ডুবিয়ে দিয়েচে। গোয়ালবাসির বিলে জল এত বেড়েচে যে, নৌকোর বুডো মাঝি বললে সে তার জ্ঞানে কখনও এমন দেখেনি, গোয়ালবাসি ও চিত্রাঙ্গপুর গ্রাম দু’খানা প্রায় ডুবে আছে। অথচ এখন আকাশে মেঘ নেই, শরতের সুনীল আকাশের নিচে রৌদ্রভর মাঠ, জল বাড়বার দরুণ নৌকো চললো মাঠের মধ্য দিয়ে, বড় বাবলা বনের পাশ কাটিয়ে। ঘন সবুজ দীর্ঘ লতানে বেতঝোপ কড় কড় ক’রে নৌকার ছইয়ের গায়ে লাগচে, মাঠের মাঝে বন্যার জলের মধ্যে জেগে আছে ছোট ছোট ঘাস, তাতে ঘন ঝোপ । পিসিমাদের গ্রামে নেীকে ভিড়তে দুপুর ঘুরে গেল। এখানে নদীর পাড় খুব উচু বলে কুল ছাপিয়ে জল ওঠে নি ; দু-পাড়েই বন , একদিকে হ্রস্ব ছায় পড়েচে জলে, অন্ত পাড়ে খররেদ্র ...এই বনের গন্ধ নদীজলের ছলছল শব্দ , বাশবনে সোনার সড়কীর মতো নতুন বাশের কোড় বাশঝাড়ের মাথা ছাড়িয়ে উঠেচে . এই শরত দুপুরের ছায়া-এই সব অতি পরিচিত দৃপ্ত একটিমাত্র মুখ মনে করিয়ে দেয় অনেকদিন আগের মুখ হয়তো একটু অস্পষ্ট হয়ে গিয়েচে, তবুও সেই মুখ ছাড়া আর কোনো মুখ মনে আসে না। নদীর ঘাটে নেমে, পথে চলতে চলতে সে মুখ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল মনের মধ্যে “এক ধরণের হাত-নাড়ার ভঙ্গি আর কি বকুনি, অজস্র বকুনি!.জগতে আর কেউ তেমন কথা বলতে পারে না। অনেক দূরের কোন অবাস্তব শূন্তে ঘুচে স্বরম, তার আকর্ষণের বাইরে এ রাজ্য। এখানে গৃহাধিষ্টাত্রী দেবী আর একজন, তার একচ্ছত্র অধিকার এখানে—মুরম কে ? এখানকার বন, নদী, মাঠ, পাখি মুরমাকে চেনে না। হীর নিজেই অবাক হয়ে গেল নিজের মনের ভাবে । পিসিমা যথারীতি কান্নাকাটি করলেন অনেকদিন পরে ওকে দেখে। আরও ঢের বেশি বুড়ী হয়ে গিয়েছেন, তবে এখনও অথর্ব হন নি। বেশ চলতে ফিরতে পারেন। হীরুর জন্তে ভাত চড়াতে যাচ্ছিলেন , হীরু বললে—তোমার কষ্ট করতে হবে না পিলিমা, আমি চি ড়ে