পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু ©¢ፃ কি চমৎকার কুমীর মুখের হাসি। হীরুর মোহ নেই, আসক্তি নেই, আছে কেবল একটা সুগভীর স্নেহ, মার, অনুকম্পা...এ এক অদ্ভুত মনের ভাব, কুমীকে সে সৰ্ব্বস্ব বিলিয়ে দিতে পারে তাকে এতটুকু খুশি করবার জন্ত । কুমী কত কি বকচে বসে বসে.পুরোনো দিনের কথা তুলচে কেবল কেবল। —মনে আছে হীরুদা, সেই একবার জেলেদের বঁাশতলায় আলেয়া জলেছিল—লেও তো এই ভাদ্রমাসে...সেই চারুপাঠ মনে আছে ? হীরুর খুব মনে আছে। সবাই ভয়ে আড়ষ্ট, আলেয়া নাকি ভূত, ষে দেখতে যায় তার অনিষ্ট হয়। হীরু সাহস করে এগিয়ে গিয়েছিল দেখতে, কুমীও পিছু পিছু গিয়েছিল। হীরু বলেছিল—আসছিস্ কেন পোড়ার মুখী, ভূত ধরে থাবে যে— কুমী ভেংচি কেটে বলেছিল—ইস্! ভূতে ধরে ওঁকে থাবে না—আমাকেই খাবে। আলেয়া বুঝি ভূত ? ও তো একরকম বাষ্প, আমি পড়িনি বুঝি চারপাঠে ? শুনবে বলব “ অনেকের বিশ্বাস আছে আলেয়া এক প্রকার ভূতযোনি, বাস্তবিক ইহা তা নয়— হীরু ধমক দিয়ে বলেছিল—রাখ, তোর চারুপাঠ—আরম্ভ করে দিলেন এখন অন্ধকারের মধ্যে চারুপাঠ, বলে ভরে মরচি– পরক্ষণেই কুমী খিলখিল করে হেসে উঠে বলেছিল--কি বললে হীরুদা, ভয়ে মরছে ? ছি হি—হি হি—এত ভয় তোমার যদি এলে কেন ? চারুপাঠ পড়লে ভয় থাকতে না চারুপাঠ তো আর পড় নি ? সেই সব পুরোনো গল্প। আলেয়া , আলেয়াই বটে। কুমীর যে খানিকট পরিবর্তন হয়েচে তা বোঝা গেল, যখন ও গ্রামের এক বিধবা গরীব মেয়ের কথা তুললে। আগে এসব কথা কুমী বলত না। এখন সে পরের দুঃখ বুঝতে শিখেচে । মুখুয্যে-বাড়ীর বড় পুরীপাল্লার মধ্যে হর মুখুয্যের এক বিধবা নাতনী—নিতান্ত বালিকা—কি রকম কষ্ট পাচ্চে, পুকুরঘাট কুমীর কাছে বসে নির্জনে মৃত স্বামীর রূপগুণের কত গল্প করে—এ কথা কুমী দরদ দিয়ে বলে গেল। সত্যিই মাতৃত্ব ওর মধ্যে জেগেচে, ওকে বদলে দিয়েচে অনেকখানি । - হঠাৎ কুমী বললে—‘অই দেখে হীরুদা বকেই যাচ্চি। তোমায় যে খেতে দেবে, সে কথা মনে নেই। তার পরে সে উঠে তাড়াতাড়ি হীরুকে ঠাই করে দিয়ে ভাত বেড়ে নিয়ে এল। হাসিমুখে বললে—জামালপুরের বাবুর আজ কিন্তু পান্ত ভাত খেতে হবে। রুচবে তো মুখে । নেৰু কেটে দেবো এখন অনেক ক’রে, নারকোল-কুম্ড়ি আছে, কচুর শাক আছে। এসব সত্যিই হীরু অনেকদিন খায় নি। যা বা সে খেতে ভালোবাসে, কুমী তার কিছুই বাদ দেয় নি। হীর আশ্চৰ্য হয়ে গেল-এতকাল পরেও কুমী মনে রেখেচে এ সব কথা । খেতে বসে হীর বললে—কুমী, ছেলেবেলা ভালো লাগে, না এখন ভালো লাগে ?