পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२ বিভূতি-রচনাবলী এগার মাইল দূরে এই রৌদ্রে নিমন্ত্রণ খাইতে যাইবার লোভ আমার ছিল না—কিন্তু নন্দলাল ওঝা নিতান্ত পীড়াপীড়ি করাতে অগত্য রাজী হইলাম—তা ছাড়া এদেশের গৃহস্থসংসার সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিবার লোভও সংবরণ করিতে পারিলাম না । পূর্ণিমার দিন দুপুরের পরে দীর্ঘ কাশের জঙ্গলের মধ্যে দিয়া কাহীদের একটি হাতী আসিতেছে দেখা গেল। হাতী কাছারিতে আসিলে মাছতের মুখে শুনিলাম হাতীটি নন্দলাল ওঝার নিজের—আমাকে লইয়া যাইতে পাঠাইয়া দিয়াছে। হাতী পাঠাইবার আবশ্বক ছিল না—কারণ আমার নিজের ঘোড়ায় অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ে পৌছিতে পারিতাম। যাহাই হউক, হাতীতে চডিয়াই নন্দলালের বাড়ীতে রওনা হইলাম। সবুজ বনশীৰ্ষ আমার পায়ের তলায়, আকাশ যেন আমার মাথায় ঠেকিয়াছে—দুর, দুর-দিগন্তের নীল শৈলমালার রেখা বনভূমিতে ঘিরিয়া যেন মারালোক রচনা করিয়াছে—আমি সে-মায়ালোকের অধিবাসী—বহু দূর স্বর্গের দেবতা। কত মেঘের তলায় তলায় পৃথিবীর কত শুামল বনভূমির উপরকার নীল বায়ুমণ্ডল ভেদ করিয়া যেন আমার অদৃশু যাতায়াত। পথে চামূটার বিল পড়িল, শীতের শেষে ও সিল্লা আর লাল হাসের বীকে ভক্তি। আর একটু গরম পণ্ডিলেই উডিয়া পলাইবে মাঝে মাঝে নিতান্ত দরিদ্র পল্পী। ফণীমনসা-ঘেরা তামাকের ক্ষেত ও খোলায় ছাওয়া দীনকুটার । মুঠিয়া গ্রামে হাতী ঢুকিলে দেখা গেল পথের দু-ধারে সারবন্দী লোক দাডাইয়া আছে আমার অভ্যর্থনা করিবার জন্য। গ্রামে ঢুকিয় অল্প দূব পরেই নন্দলালের বাড়ী। খোলায় ছাওয়া মাটির ঘর আট-দশখানা—সবই পৃথক পৃথকৃ, প্রকাও উঠানের মধ্যে ইতস্তত ছড়ানো। আমি বার্ডতে ঢুকিতেই দুই বার হঠাৎ বন্দুকের আওয়াজ হইল । চমকাইয়া গিয়াছি—এমন সময়ে সহাস্যমুখে নন্দলাল ওঝা আসিয়া আমার অভ্যর্থনা করিয়া বাড়ীতে লইয়া গিয়া একটা বড় ঘরের দাওয়ায় চেয়ারে বসাইল । চেয়ারখানি এদেশের শিশুকাঠের তৈয়ারী এবং এদেশের গ্রাম্য মিস্ত্রীর হাতেই গড় । তাহার পর দশ-এগার বছরের একটি ছোট মেয়ে আসিয়া আমার সামনে একখানা থাল ধরিল—থালায় গোটাকতক আস্ত পান, আস্ত সুপারি, একটা মধুপর্কের মত ছোট বাটিতে সামান্ত একটু আতর, কয়েকটি শুষ্ক খেজুর ; ইহা লইয়া কি করিতে হয় আমার জানা নাই—অামি আনাড়ির মত হাসিলাম ও বাটি হইতে আঙলের আগার একটু আতর তুলিয়া লইলাম মাত্র। মেয়েটিকে দু’একটি ভদ্রতাসূচক মিষ্টকথাও বলিলাম ! মেয়েটি থালা আমার সামনে রাখিয়া চলিয়া গেল । তার পর খাওয়ানের ব্যবস্থা। নন্দলাল যে ঘটা করিয়া খাওয়াইবার ব্যবস্থা করিয়াছে, তাহা আমার ধারণা ছিল না। প্রকাণ্ড কাঠের পিডির আসন পাতা—সম্মুখে এমন আকারের একখানি পিতলের থালা আসিল, যাহাতে করিয়া আমাদের দেশে দুর্গাপূজার বড় নৈবেদ্য সাজায়। থালায় হাতীর কামের মত পুরী, বাখুয়া শাক ভাজা, পাকা শশার রায়ত, কাচ তেঁতুলের ঝোল, মহিষের দুধের দই, পেড। খাবার জিনিসের এমন অদ্ভূত যোগাযোগ কখনও দেখি নাই। আমায় দেখিবার জন্ত উঠানে লোকে লোকারণ্য হইয়া গিয়াছে ও