পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক *Kv আমার দিকে এমন ভাবে চাহিতেছে যে, আমি যেন এক অদৃষ্টপূৰ্ব্ব জীব। শুনিলাম, ইহার সকলেই নন্দলালের প্রজা । সন্ধ্যার পূৰ্ব্বে উঠিয়া আসিবার সময় নন্দলাল একটি ছোট থলি আমার হাতে দিয়া বলিল —হুজুরের নজর। আশ্চৰ্য্য হইয় গেলাম। থলিতে অনেক টাকা, পঞ্চাশের কম নয়। এত টাকা কেহ কাহাকেও নজর দেয় না, তাছাড়া নন্দলাল আমার প্রজাও নয়। নজর প্রত্যাখ্যান করাও গৃহস্থের পক্ষে নাকি অপমানজনক—মুতরাং আমি থলি খুলিয়া একটা টাকা লইয়া থলিট। তাহার হাতে ফিরাইয়া দিয়া বলিলাম—তোমার চেলেপুলেদের পেড়া থাইতে দিও। নন্দলাল কিছুতেই ছাড়িবে না—আমি সে-কথায় কান না-দিয়াই বাহিরে আসিয়া হাতীর পিঠে চড়িলাম । পরদিনই নন্দলাল ওঝা আমার কাছারিতে গেল, সঙ্গে তাহার বড় ছেলে। আমি তাহাদিগকে সমাদর করিলাম—কিন্তু খাইবার প্রস্তাবে তাহার রাজী হইল না। শুনিলাম মৈথিল ব্রাহ্মণ অন্ত ব্রাহ্মণের হস্তের প্রস্তুত কোন খাবারই খাইবে না। অনেক বাজে কথার পরে নন্দলাল একান্তে আমার নিকট কথা পড়িল, তাহার বড় ছেলে ফুলকিয় বইহারের তহশীলদারীর জন্ত উমেদার—তাহাকে আমায় বাহাল করিতে হইবে। আমি বিস্মিত হইয়া বলিলাম—কিন্তু ফুলকিয়ার তহশীলদার তো আছে—সে পোস্ট তো খালি নেই। তাহার উত্তরে নন্দলাল আমাকে চোখ ঠারিয়া ইশারা করিয়া বলিল, হুজুর, মালিক তে আপনি । আপনি মনে করলে কি না হয় ? আমি আরও অবাক হইয়া গেলাম। সে কি রকম কথা ! ফুলকিয়ার তহশীলদার ভালই কণজ করিতেছে—তাহাকে ছাড়াইয়া দিব কোন অপরাধে ? নন্দলাল বলিল—কত রুপেয়া হুজুবকে পান খেতে দিতে হবে বলুন, আমি আজ সজেই হুজুৰকে পৌছে দেব। কিন্তু আমার ছেলেকে তহশীলদারী দিতে হবেই হুজুরের। বলুন কত, হুজুর। পাচ-শ' ? এতক্ষণে বেশ বুঝিতে পারিলাম, নন্দলাল যে আমাকে কাল নিমন্ত্রণ করিয়াছিল তাহার প্রকৃত উদ্দেশ্য কি ! এদেশের লোক যে এমন ধড়িবাজ, তাহ জানিলে কখনো ওখানে যাই ? আচ্ছা বিপদে পড়িয়াছি বটে ! নন্দলালকে স্পষ্ট কথা বলিয়াই বিদায় করিলাম। বুঝিলাম নন্দলাল আশা ছাড়িল না। আর একদিন দেখি, ঘন বনের ধর নন্দলাল আমার অপেক্ষায় দাড়াইয়া আছে। কি কুক্ষণেই উহার বাড়ীতে নিমন্ত্রণ থাইতে গিয়াছিলাম—দুখান পুৰী খাওয়াইয়া সে যে আমার জীবন এমন অতিষ্ঠ করিয়া তুলিবে—তাহা আগে জানিলে কি উহার ছায়া মাড়াই ? নন্দলাল আমাকে দেখিয়া মিষ্টি মোলায়েম হাসিয়া বলিল—নোমোস্কার হুজুর। —ছ । তার পর, এখানে কি মনে করে ? —হজুর সবই জানেন। আমি আপনাকে বারোশ টাকা নগদ দেব। আমার ছেলেকে কাজে লাগিয়ে দিন ।