পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. Pጫ8 বিভূতি-রচনাবলী নেই—সে সমাজ আবার সমাজ ? যে খায় খাক, একটা ভ্ৰষ্ট স্ত্রীলোককে নিয়ে আমি বা আমার বাড়ীর কেউ খাবে না—আমার টাকা নেই বটে, কিন্তু তেমন বাপের—ইত্যাদি । তিন-চারজন ছুটিল কুমার চক্রবর্তীকে বুঝাইয়া ঠাণ্ড করিয়া ফিরাইয়া স্মানিতে। কুমার চক্রবর্তী যে একরোখা, চড়ামেজাজের মানুষ সবাই তাহ জানে। কিন্তু, ইহাও জানে যে, সে রাগ তার বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় না। নায়েব মশায় বলিলেন—তুমি ষেও না হরি খুড়ো— তোমার মুখ ভালো না, আরও চটিয়ে দেবে। কীৰ্ত্তিক যাক, আর শুণমলাল যাক— হারাণ চক্ৰবৰ্ত্তীর যে মেয়েটিকে লইয়া ঘোট চলিতেছে, সে মেয়েটি কাজের বাড়ীতে পদার্পণ করে নাই । পাশের বাড়ীর গোলার নিচে সে এতক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া ছিল, আজই একটা মিটিং হইয়া তাহার সম্বন্ধে যে চূড়ান্ত সামাজিক নিম্পত্তি কিছু হইবে, তাহা সে জানিত এবং তাঁহারই • ফল কি হয় জানিবার জন্তই সে অপেক্ষা করিতেছিল। 'হঠাৎ চেঁচামেচি শুনিয়া সে ভয় পাইয়া উঠিয়া দাডাইল এবং তাহারই নাম কুমার চক্রবত্তীর মুখে-ওভাবে উচ্চারিত হইতে শুনিয়া পাচিলের ঘুলঘুলি দিয়া চুরু হুর বক্ষে ব্যাপারটা কি দেখিবার চেষ্টা পাইল । পাচিলের ওপাশে নিকটেই কেশবকে দেখিতে পাইরা সে ডাকিল-কাকা, ও কাকাকেশব কাকাকে সে ছেলেবেলা হইতে জানে, কেশব কাকার মতো নিপাট ভালোমাকুয এ গায়ে দুটি নাই । আহা, সে শুনিয়াছে যে, আজই সকালে কেশব কাকার খোকাটি মারা গিয়াছে, অথচ নিজের দুর্ভাবনার আজ সকাল হইতে সে এতই ব্যস্ত যে, কাকাদের বাড়ী গিয়া একবার দেখা করিয়া আসিতে পৰ্য্যন্ত পারে নাই। কেশব বলিল—কে ডাকে ? কে, বিদ্যুৎ ? কি বলচ মা ? তা ওখানে দাড়িয়ে কেন ? হারাণ চক্ৰবৰ্ত্তীর মেয়েটির নাম বিদ্যুৎ। খুব সুন্দরী ন হইলেও বিদ্যুতের রূপের চটক আছে সন্দেহ নাই, বয়স এই সবে উনিশ । বিদ্যুৎ মানমুখে গলার সুমিষ্ট মুরে অনেকখানি খাটা মেয়েলী সহানুভূতি জানাইয়া বলিল —কণকা, খোকশমণি না কি নেই ? আমি সব শুনেছি সকালে । কিন্তু কোথাও বেরুতে পারিনি সকাল থেকে, একবার ভেবেছিলুম যাব। কেশব উত্তর দিতে গিয়া চাহিয়া দেখে বিদ্যুতের চোখ দিয়া জল পড়িতেছে। এতক্ষণ এই একটি লোকের নিকট হইতে সে সত্যকার সহানুভূতি পাইল । কেশব একবার গলা পরিষ্কার করিয়া বলিল—ত যা, এখানে দাড়িয়ে থাকিস্ নে—যা । ও ঘোটের কথা শুনে আর কি হবে, তুই বাড়ী যা । কুমার চকোত্তি রাগারগি করে চলে গিয়েছে, ওকে সবাই গিয়েছে ফিরিয়ে আনতে। তোর ওপর খুব রাগ কুমারের। তবে ও তো আর সমাজের কর্তা নয়, ওর রাগে কি-ই বা এসে যাবে! —কি বলছিল ওরা ?