পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু פרסי করিয়াছে, তাহার সঙ্গে আর শর্ত করিয়া ফল নাই। আর এ শর্তের ব্যাপার নয়। একটা স্ত্রীলোককে সামাজিক শাসন করা হইতেছে, ইহার মধ্যে শর্ত ই বা কিসের ? মাথা মুড়াইয়া ঘোল ঢালিয়া যে গ্রাম হইতে বিদায় করিয়া দেওয়া হয় নাই এতদিন, ইহাই যথেষ্ট । সুতরাং হারাণ চক্রবর্তী যেমন একঘরে ছিলেন, তেমনই রহিয়া গেলেন। - তারপর ব্রাহ্মণ-ভোজনের পালা । কেশবের মরণাশৌচ, সে পরিবেশন করিবে না, ভিখারী বিদায়ের ভার পড়িল তার উপর। দু'তিন দফা ব্রাহ্মণ খাওয়ান ও ভিখারী বিদায় করিতে । সন্ধ্যা হইয়া গেল। সন্ধ্যার পরে শূদ্ৰভোজন, সে চলিল রাত দশটা পৰ্য্যন্ত । কেশব সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর যখন খাইতে বসিল, তখন রাত এগারটা । আয়োজন ভালই হইয়াছিল, কিন্তু এত রাত্রে জিনিসপত্র বেশি কিছু ছিল না। কেবল দই ও মিষ্টি এবং দু'তিন রকমের টক তরকারি দিয়া কেশব পরিতৃপ্তির সঙ্গে দুই জনের আহার এক, করিল। পরে স্ত্রীকে লইয়া অন্ধকারেই নিজের বাড়ী রওনা হইল । : কেশবের স্ত্রীও খুব খাইয়াছে। কেশবের প্রশ্নের উত্তরে বলিল—ত গিীর বড়, মেয়ে, নিজে দাড়িয়ে থেকে খাওয়ালে। নিজের হাতে আমার পাতে সন্দেশ দিয়ে গেল। খুব যত্ন করেছে। রান্নাবান্না কি চমৎকার হয়েছে, না ? কেশব বলিল—তা বড়লোকের ব্যাপার, চমৎকার হবে না ? নয় তো এমন অসময়ে কপি কোথা থেকে এই পাড়াগায়ে আসে বল দিকি ? পেয়েছিলে কপির তরকারি ? —তা আর পাইনি ? দু দুবার দিয়েছে আমার পাতে। হ্যা গা, এখন কপি কেখেকে আনালে ? কলকাতায় কি বারমাস কপি মেলে ? বাড়ীর উঠানে তুলসীতলায় একটা মাটির প্রদীপ তখনও টিমটিম করিয়া জলিতেছে। কেশবের স্ত্রী বলিল-ও বাড়ীর ছোট-বোঁ জালিয়ে দিয়ে গিয়েছে, আহা বড় ভালো মেয়ে ! আজ সকালে কেঁদে একেবারে আকুল। সকালে যে ভাবে ইগরা ফেলিয়া রাখিয়া গিয়াছিল, ঘরবাড়ী সেই ভাবেই পড়িয়া আছে । কারো সাড়া-শব্দ নাই,–নির্জন, নিস্তব্ধ। বাড়িখানা খ খ করিতেছে । আশে পাশে ঘন অন্ধকার, কেবল তুলসীতলায় ওই মিটমিটে মাটির প্রদীপের আলোটুকু ছাড়া । কেশব শুইবামাত্র ঘুমাইরা পড়িল । অনেক রাত্রে ঘুমের মধ্যে কেশব স্বপ্ন দেখিতেছিল, বিদ্যুৎ আসিয়া উঠানের মাঝখানে দাড়াইয়া কাদ-কঁাদ মুখে বলিতেছে—কাক, আজই বুঝি.একবার ভেবেছিলাম জুীসব, কিন্তু যে দুর্ভাবনা আমার ওপর দিয়ে আজ সারাদিন. 沙 বাহিরে ঝমঝম বৃষ্টির শবে তার ঘুম ভাঙিয়া গেল। সে ধড়ফড় করিয়া বিছানায় উঠিয়া বসিল—সৰ্ব্বনাশ! ভয়ানক বৃষ্টি আসিয়াছে! খোকা, কচি ছেলে, নিউমোনিয়ার রোগী, বঁাশতলায় তার ঠাও লাগিতেছে যে ! পয়ক্ষণেই ঘুমের ঘোরটুকু ছুটিয়া যাইতেই নিজের ভুল বুঝির আবার গুইরা পড়িল।