পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

있8 বিভূতি-রচনাবলী —তুমি পাগল নন্দলাল ? আমি বহাল করবার মালিক নই। যাদের জমিদারী, তাদের কাছে দরখাস্ত করতে পারে । তাছাড়া বৰ্ত্তমানে যে রয়েছে—তাকে ছাড়ব কোন অপরাধে ? বলিয়াই বেশী কথা না বাডাইয়া ঘোড ছুটাইয়া দিলাম। ক্রমে আমার কড়া ব্যবহারে নন্দলালকে আমি আমার ও স্টেটের মহাশত্ৰু করিয়া তুলিলাম। তখনও বুঝি নাই, নন্দলাল কিরূপ ভয়ানক প্রকৃতির মানুষ। ইহার ফল আমাকে ভাল করিয়াই ভুগতে হইয়াছিল। ૨ উনিশ মাইল দূরবর্তী ডাকঘর হইতে ডাক আন এখানকার এক অতি আবশ্বক ঘটনা। অতদুরে প্রতিদিন লোক পাঠানে চলে না বলিয়া সপ্তাহে দুবার মাত্র ডাকঘরে লোক যাইত। মধ্য-এশিয়ার জনহীন, দুস্তর ও ভীষণ টাক্লামাকান মকভূমির তাবুতে বসিয়া বিখ্যাত পর্যটক সেভেন হেডিন ও বোধ হয় এমনি আগ্রহে ডাকের প্রতীক্ষা করিতেন। আজি আট-নয় মাস এখানে আসিবার ফলে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এই জনহীন বন-প্রান্তরে স্বর্যশস্ত, নক্ষত্ররাজি চাদেব উদয়, জ্যোৎস্না ও বনের মধ্যে নীল-গাইয়ের দৌড় দেখিতে দেখিতে, যে-বহির্জগতের সঙ্গে সকল যোগ হীরাইয়া ফেলিয়াছি—ডাকের চিঠি কয়েকথানির মধ্য দিয়া আবার তাহার সহিত একটা সংযোগ স্থাপিত হইত। নিদিষ্ট দিনে জওয়াহিরলাল সিং ডাক আনতে গিয়াছে—আজি দুপুরে সে আসিবে। আমি ও বাঙালী মুহুরী বাবুটি ঘন ঘন জঙ্গলের দিকে চাহিতেছি। কাছারি হইতে মাইল দেড় দূরে একটা উচু ঢিবির উপর দিয়া পথ। ওখানে আসিলে জওয়াহিরলাল সিকে বেশ স্পষ্ট দেখা যায়। বেলা দুপুৰ হইয়া গেল। জওয়াহিরলালের দেখা নাই। হামি ঘন ঘন ঘর-বাহির করিতেছি । এখানের আপিসের কাজের সংখ্যা নিতান্ত কম নয় । বিভিন্ন আমিনের রিপোটদেখা, দৈনিক ক্যাশবই সই করা, সদরের চিঠি-পত্রের উত্তর লেথা, পাটোয়ারী ও তইশীলদারদের আদায়ের হিসাব-পরীক্ষা, নানাবিধ দরখাস্তের ডিগ্রী-ডি মিস্ করা, পূর্ণিয় মুঙ্গের ভাগলপুর্ব প্রভৃতি স্থানে নানা আদালতে নানাপ্রকার মামলা ঝুলিতেছে—ঐ সকল স্থানের উকীল ও মামলা-তরিক রকদের রিপোট পাঠ ও তার উত্তর দেওয়া—আরও নানা প্রকার বড় ও খুচরা কাজ প্রতিদিন নিয়ম-মত না করিলে দু-তিনদিনে এত জমিয়া যায় যে, তখন কাজ শেষ করিতে প্রাণান্ত হইয়া উঠে। ডাক আসিবার সঙ্গে সঙ্গে আবার একরাশি কাজ আসিয়া পড়ে। শহরের নানা ধরণের চিঠি, নানা ধরণের আদেশ, অমুক জায়গায় যাও, অমুকের সঙ্গে অমুক মহালের বন্দোবস্ত কর, ইত্যাদি।