পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రిసిe বিভূতি-রচনাবলী কথার উপযুক্ত বটে। গ্রাম্য শ্মশান, একটা বড় তেঁতুলগাছ আর এক দিকে কতকগুলো শিমুল গাছ। দু-চার দিন আগের একটা চিতার কাঠকয়লা আর একটা কলসী জলের ধারে পড়ে রয়েছে। কোনদিকে লোকজন নেই। অজ্ঞাতসারে আমার গা যেন শিউরে উঠল। পাগলী তখনও বলে যাচ্ছে। অনেক সব কথা, অদ্ভূত ধরনের কথা ! —এক ধরনের অপদেবতা আছে, তন্ত্রে তাদের বলে হাকিনী । তারা অতি ভয়ানক জীব । বুদ্ধি মানুষের চেয়ে অনেক কম, দয়া মারা বলে পদার্থ নেই তাদের। পশুর মতো মন। কিন্তু তাদের ক্ষমতা সব চেয়ে বেশি। এরা যেন প্রেতলোকের বাঘ-ভালুক। ওদের দিয়ে কাজ বেশি হয় বলে যাদের বেশি দুঃসাহস, এমন তান্ত্রিকেরা হাকিনীমন্ত্রে সিদ্ধ হবার সাধনা করে। হ'লে খুবই ভালো, কিন্তু বিপদের ভয়ও পদে পদে। তাদের নিয়ে যখন তখন খেলা করতে নেই, তাই তোকে বারণ করি। তুই বুঝি নে, তাই রাগ করিস। কৌতুহল আর সংবরণ করতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম—তুমি তাহলে হাকিনীমন্ত্রে সিদ্ধ, না?.. ঠিক বল। পাগলী চুপ করে রইল। আমি তাকে আর প্রশ্ন করলাম না, বুঝলাম পাগলী এ-কথা কিছুতেই বলবে না। কিন্তু এrবিষয়ে আমার কোন সন্দেহ রইল না । পরদিন গ্রামের লোকে আমাকে পাগলীর সম্বন্ধে অনেক কথা বললে। বললে—আপনি ওখানে যাবেন না অত ঘন ঘন। পাগলী ভয়ানক মানুষ, ওর মধ্যে এমন শক্তি আছে, আপনার একেবারে সর্বনাশ ক’রে দিতে পারে। ওকে বেশি ঘাটাবেন না মশায় । গায়ের কোন লোক ওর কাছেও ঘেষে না । বিদেশী লোক মারা পড়বেন শেষে ? মনে ভাবলাম, কি আমার করবে, যা করবার তা করেছে। তার কাছে না গিয়ে থাকবার শক্তি আমার নেই। তার পরে একদিন যা হ’ল, তা বিশ্বাস করবেন না। একদিন সন্ধ্যের পরে পাগলীর কাছে গিয়েছি, কিন্তু এমন ভাবে গিয়েছি পাগলী ন টের পায়। পাগলীর সেই বটতলায় গিয়ে হঠাৎ অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। বটতলায় পাগলী বসে নেই, তার বদলে একটি ষোড়শী বালিকা গাছের গুড়িতে ঠেস দিয়ে সামনের দিকে চেয়ে রয়েছে। চোখের ভুল নয় মশার, আমার তখন কাচা বয়েস, চোখে ঝাপসা দেখবার কথা নয়, স্পষ্ট দেখলাম। ভাবলাম, তাই তো ! এ আবার কে এল? যাই কি না যাই ? দু-এক পা এগিয়ে সঙ্কোচের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম, মা, তিনি কোথায় গেলেন ? মেয়েটি হেসে বললে, কে ? —সেই তিনি, এখানে থাকতেন। মেয়েটি খিলখিল করে হেসে বললে—আ মরণ, কে তার নামটাই বল না—নাম বলতে লজ্জা হচ্ছে নাকি ?