পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু \రిస్టి) আমি চমকে উঠলাম। সেই পাগলীই তো ! সেই হাসি, সেই কথা বলবার ভঙ্গি। এই ষোড়শী বালিকার মধ্যে সেই পাগলী রয়েছে লুকিয়ে! সে এক অদ্ভূত আকৃতি, ভেতরে সেই পরিচিত পাগলী, বাহিরে এক অপরিচিত রূপসী ষোড়শী বালিকা । মেয়েটি হেসে ঢ’লে পড়ে আর কি। বললে—এস না, ব’স না এসে পাশে–লজ্জা কি ? আহা, আর অত লজ্জায় দরকার নেই। এস— হঠাৎ আমার বড় ভয় হ’ল। মেয়েটির রকম-সকম আমার ভালো বলে মনে হ’ল না— তা ছাড়া আমার দৃঢ় বিশ্বাস হ’ল এ পাগলীই, আমায় কোন বিপদে ফেলবার চেষ্টায় আছে। ফিরে চলে যাচ্ছি, এমন সময়ে পরিচিত কণ্ঠের ডাক শুনে থমকে দাডালাম, দেখি, বটতলায় পাগলী বসে আছে—আর কেউ কোথাও নেই। আমার তখনও ভয় যায় নি। ভাবলাম, আজ আর কিছুতেই এখানে থাকব না, আজি ফিরে যাই । পাগলী বললে—এস, ব’স । বললাম—তুমি ও-রকম ছোট মেয়ে সেজেছিলে কেন ? তোমার মতলবখানা কি ? পাগলী বললে—আ মরণ, ঘাটের মডা, আবোল-তাবোল বকছে । বললাম—ন, সত্যি কথা বলছি, আমার কোন ভয় দেখিও না। যখন তোমার মা বলে: ডেকেছি । • , পাগলী বললে—শোন তবে । তুই সে-রকম নস্। তন্ত্রের সাধনা তোকে দিয়ে হবে না, অত সাধু সেজে থাকবার কাজ নয়। থাক, তোকে দু-একটা কিছু দেব, তাতেই তুই ক’রে খেতে পারবি। একটা মড চাই। আসবে শিগগির অনেক মডা, এই ঘাটেই আসবে। ততদিন অপেক্ষ করু। কিন্তু যা বলে দেব, তাই করবি। রাজী আছিস ? শবসাধনা ভিন্ন কিছু হবে না। তখন আমি মরিয়া হয়ে উঠেছি। আমি ভীতু লোক ছিলাম না কোন কালেই, তবুও কখনও মডার উপরে বসে সাধন করব এ-কল্পনাও করি নি। কিন্তু রাজী হলাম পাগলীর প্রস্তাবে। বললাম—বেশ, তুমি যা বলবে তাই করব। কিন্তু পুলিসের হাঙ্গামার মধ্যে যেন না পড়ি। আর সব তাতে রাজী আছি । একদিন সন্ধ্যের কিছু আগে গিযেছি। সেদিন দেখলাম পাগলীর ভাবটা যেন কেমন কেমন। ও আমায় বললে—একটা মঙ পাওয়া গিয়েছে, চুপি চুপি এস। জলের ধারে বড় একটা পাকুড় গাছের শেকড জলের মধ্যে অনেকখানি নেমে গিয়েছে। সেই জড়ানো পাকানো জলমগ্ন শেকড়ের মধ্যে একটা ষোল-সতের বছরের মেয়ের মড়া বেধে. আছে। কোন ঘাট থেকে ভেসে এসেছে বোধ হয়। ও বললে, তোল মডাটা—শেকড বেয়ে নেমে যা । জলের মধ্যে মডা হালকা হবে। ওকে তুলে শেকড়ে রেখে দে। ভেসে না যায়। তখন কি করছি জ্ঞান ছিল না । মড়ার পরনে তখনও কাপড়, সেই কাপড় জড়িয়ে