পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু లిసిన সুবি আর কোন আগ্রহ দেখাইল না। শুধু বলিল-দুপুরে মা কথা সেলাই করবে, আমাকে কাছে বসে স্বচে মুতো পরাতে হবে। আমার যাওয়া তো হবে না। রাধা বলিল—সেই গানটা একটু গা না মুৰি ? সুবি চায়ের পাত্রগুলি হাতে লইয়া চলিয়া যাইতে উদ্যত অবস্থায় বলিল—এখন সময় নেই। অনেক কাজ। চলি । রাধা অতি করুণ মিনতির মুরে বলিল–গা না ভাই, দুটো লাইন গা । বলচি এত করে’— বলিতে ভুলিয়া গিয়াছি পাড়াগায়ের মেয়ের তুলনায় সুবি গান গাহিতে পারে মন নয়। কলিকাতায় থাকিবার সময় নিধুদা’র কাছে সে অনেক গান শিখিয়ছিল। নিধুদ তার কাকীমার পিসতুতে ভাইয়ের ছেলে। কলেজে পড়ে, বেশ গান গাহিতে পারে, চেহারাও ভালো । সুবিকে দিনকতক সে গান শিখাইতে ঘন ঘন আসিত । সুবি গুন গুন করিয়া মাত্র দু কলি গাহিল— যৌবন সরসী-নীরে মিলন শতদল কোন চঞ্চল বন্যায় টলমল টলমল । ঠিক এই সময় নাপিতদের ঘাঠে নাপিত-বেী এক কঁাড়ি বাসন লইয়া মাজিতে আসিল । নাপিত-বোঁ খামবর্ণ, বয়স উনিশ কুড়ি, খুব সুন্দর নিটোল গড়ন, স্বাস্থ্যবতী, মুখশ্রীর মধ্যে একটা মুলভ ও সহজ সৌন্দৰ্য্য আছে—অর্থাৎ যে শ্ৰীট এই বয়সেই থাকে, পাচ বছর পরে যাহার আর বিশেষ কিছু অস্তিত্ব থাকিবে না। কিন্তু এখন যখন সেটা আছে, তখন খুব জমকালে ভাবেই আসর মাতাইয়া রা:ি .াছে । নাপিত-বোঁ সুবিকে প্রায় পূজা করিয়া থাকে মনে মনে। তাহার জীবনে এমন মেয়ে সে দেখে নাই। অমন রূপ, অমন কথাবাভ, অমন লেখাপড়া, অমন গান—সকল দিকেই সুবি নাপিত-বোঁয়ের মন হরণ করিয়া লইয়াছেন । যে পাড়াগায়ে নাপিত-বৌয়ের বাপের বাড়ী, সে গায়ে এমন একটি মেয়ের কল্পনাও করা শক্ত। ইহার সঙ্গে আলাপ পরিচয়ের সুযোগ পাইয়া সে ধন্ত হইয়া গিয়াছে। নাপিত-বোঁ আঁচলের চাবিটা শক্ত করিয়া গেরে দিতে দিতে মুবির দিকে প্রশংসমান দৃষ্টিতে চাহিয়া গম শুনিতে লাগিল । বলিল—ভারি চমৎকার গল। দিদিমণি আপনার । কখনো এমন শুনিনি, কি গানটা দিদিমণি ? সুবি পদগুলি আবৃত্তি করিয়া গানটি বলিয়া গেল। নাপিত-বেী গানের ভাষা বিন্দুবিসর্গও বুঝিল না। মুবির মন যোগাইবার জন্ত একমনে শুনিবার ভান করিয়া মাঝে মাঝে ঘাড় নাড়িতে লাগিল। সুবি ভাবিতেছিল, এ বৰ্ব্বরদের গান শুনাইয়া লাভ কি ? আজকাল তাহার গলা সত্যিই ভালে হইয়াছে। নিধুদা যদি শুনিত .