পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬ বিভূতি-রচনাবলী বেশী অনুভব করি যে কতবার ভাবিয়াছি এ জীবন আমার পক্ষে অসহ । কলিকাতাতেই আমার সব, পূর্ণিয়া বা মুঙ্গেরে কে আছে যে সেখানে যাইব ? কিন্তু সদর-আপিসের বিনা অনুমতিতে কলিকাতায় যাইতে পারি না—তাছাড অর্থব্যয়ও এত বেশী যে দু-পাচ দিনের জন্ত যাওয়া পোষায় না । Nలి কয়েক মাস মুখে-দুঃখে কাটিবার পর চৈত্র মাসের শেষ হইতে এমন একটা কাণ্ডের স্বত্রপাত হইল, যাহা আমার অভিজ্ঞতার মধ্যে কখনও ছিল না। পৌষ মাসে কিছু কিছু বৃষ্টি পড়িয়াছিল, তার পর হইতে ঘোর অনাবৃষ্টি দেখা দিল । মাঘ মাসে বৃষ্টি নাই, ফাঙ্কনে না, চৈত্রে না, বৈশাখে না । সঙ্গে সঙ্গে যেমন অসহ গ্রীষ্ম, তেমনি নিদাকণ জলকষ্ট। সাদা কথায় গ্রীষ্ম বা জলকষ্ট বলিতে এ বিভীষিকাময় প্রাকৃতিক বিপৰ্য্যয়ের স্বরূপ কিছুই বোঝানো যাইবে না। উত্তরে আজমাবাদ হইতে দক্ষিণে কিষণপুর-পূৰ্ব্বে ফুলকিয়া বইহার ও লবটুলিয়া হইতে পশ্চিমে মুঙ্গের জেলার সীমানা পৰ্য্যন্ত সারা জঙ্গল-মহালের মধ্যে যেখানে যত খাল, ডোবা, কুণ্ডী অর্থাৎ বড় জলাশয় ছিল—সব গেল শুকাইয়া। কুয়া খুঁডিলে জল পাওয়া যায় না—যদি বালির উন্থই হইতে কিছু কিছু জল ওঠে, ছোট এক বালতি জল কুয়ায় জমিতে এক ঘণ্টার উপর সময় লাগে। চারিধারে হাহাকার পডিয়া গিয়াছে। পূৰ্ব্বে একমাত্র কুশী নদী ভরসা—সে আমাদের মহালের পূর্বতম প্রান্ত হইতে সাত আট মাইল দূরে বিখ্যাত মোহনপুর রিজাভ ফরেস্টের ওপারে। আমাদের জমিদারী ও মোহনপুরা অরণের মধ্যে একটা ছোট পাহাড়ী নদী নেপালের তরাই অঞ্চল হইতে বহিয়া আসিতেছে—কিন্তু বৰ্ত্তমানে শুধু শুষ্ক বালুময় খাতে তাহার উপলঢাকা চরণচিহ্ন বিদ্যমান। বালি খুঁড়িলে যে জলটুকু পাওয়া যায়, তাহারই লোভে কত দূরের গ্রাম হইতে মেয়ের কলসী লইয়া আসে ও সারা দুপুর বালি-কাদা ছানিয়া আধ-কলসীটাক ঘোলা জল লইয়া বাড়ী ফিরে । কিন্তু পাহাড়ী নদী—স্থানীয় নাম মিছি নদী—আমাদের কোনও কাজে আসে না— কারণ আমাদের মহাল হইতে বহু দূরে। কাছারিতেও কোনো বড় ইদারা নাই—ছোট যে বালির পাতকুয়াটি আছে, তাহা হইতে পানীয় জলের সংস্থান হওয়াই বিষম সমস্তার কথা দাড়াইল। তিন বালতি জল সংগ্ৰহ করিতে দুপুর ঘুরিয়া যায়। দুপুরে বাহিরে দাড়াইয়া তাম্রাভ অগ্নিবী আকাশ ও অৰ্দ্ধশুস্ক বনঝাউ ও লম্বা ঘাসের বন দেখিতে ভয় করে—চারি ধার যেন দাউ দাউ করিয়া জলিতেছে, মাঝে মাঝে আগুনের হস্কার মত তপ্ত বাতাস সৰ্ব্বাঙ্গ ঝলসাইরা বহিতেছে—স্বৰ্য্যের এ রূপ, দ্বিপ্রহরের রৌদ্রের এ ভয়ানক রুদ্র রূপ কখনও দেখি নাই, কল্পনাও করি নাই। এক-এক দিন পশ্চিম দিক হইতে বালির ঝড় বয়—এ সব দেশে চৈত্র-বৈশাখ মাস পশ্চিমে বাতাসের সময়-কাছারি হইতে এক