পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 eVo বিভূতি-রচনাবলী ছ’ভরির হারছড়ার লোকসানের ব্যথাও যেন মন হইতে মুছিরা যায়। কি চমৎকার! দেখিলে জীবন সার্থক হয় বটে, মন ভরিয় ওঠে বটে। সংসারে এত মুখ, এত রূপ, এত আনন্দও আছে | পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, রাধা কি বুলি, কি পাইল জানি ন-কিন্তু একথা খুবই সত্য যে,মেল গাড়ীখানা ছাড়িয়া গেলে রাধা দেখিল যে, সে যেন নতুন মানুষ হইয়া গিয়াছে। মনে নতুন উৎসাহ, হাতে পায়ে নতুন বল, চোখে নতুন ধরনের দৃষ্টি। সে যেন রাধা নয়—যে সংসারে অসহায়, অনাহুত, উপেক্ষিত, অবলম্বনহীন এবং যার শেষ সম্বল ছ' ভরির হারছড়াটা পৰ্য্যন্ত শাশুড়ী যুচাইরা দিয়াছে। একটুখানি সহানুভূতির কথা ও মিষ্টি হাসির লোভে তাকে কালই ডোবার ঘাটে সুবির অজস্র খোশামোদ করিতে হইবে । নবুকে বলিল—ওদের কাছ থেকে এক পেয়ালা চা নিয়েই আয় নবু, তুই আর আমি ভাগ করে থাই। যাক গে চার পয়সা । আমাদের ট্রেনের ঐখন অনেক দেরি। ততক্ষণ এক পেয়ালা চ খেয়ে নেওয়া যাক। বাড়ী গিয়ে যেন মা'র কাছে বলিস নে। অকারণ মনটা ভালো ছিল না । এক একদিন এ রকম হয় । কিছু পড়তে ভালো লাগে না, কিছু ভাবতে ভালো লাগে না, কারুর সঙ্গে কথা বলতেও ভালো লাগে না । মনে হয়, যেন মনের চাকার তেল ফুরিয়ে গিয়েচে—‘অয়েল' না করে নিলে চাকা আর চলবে না, ক্রমে মরচে পড়ে আসবে। তারপর কবে একদিন ফুট, করে বন্ধ হয়ে যাবে। জেলেপাড়া লেনে এক পুরোনো তাসের আড্ডায় গেলুম। সেই সব পুরোনো বন্ধুরা এসে জুটেচে—তাস কিন্তু ভাল লাগল না। তাস খেলে জিতব, অন্তদিন এতে কত উৎসাহ, আনন্দ পাই । আজ মনে হ’ল, না হয় জিতলামই, তাতেই বা কি ? এদের গল্প-গুজব ভালো লাগল না। অর্থহীন—অর্থহীন—এই নিচু বৈঠকখানা ঘর, চূর্ণ-বালিখলা দেওয়াল, সেই সব একঘেয়ে সন্ত ওলিওগ্রাফ, ছবি—কালীয়দমন, অন্নপূর্ণর ভিক্ষাদান, কি একটা মাথায়ুও ল্যাও স্কেপ –একঘেয়ে কথাবাৰ্ত্তা, চিরকাল, যা শুনে আসচি—হঠাৎ মন বিরল ও বিরূপ হয়ে -উঠল—সব বাজে, সব অর্থহীন,—পাশের একজনকে জিজ্ঞেস করলুম—আপনার বেশ ভালো লাগচে ? মনে কোনো রকম সে অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে রইল। বললে—কেন, ভালো লাগচে না কেন ? কেন বলুন তো – মন আরও তিক্ত হয়ে উঠল। কাজের ছুতোয় সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লুম। বেলা চারটে বাজে। ফিরিওয়ালারা গলির মধ্যে ইকিচে—ছেলেরা বই দপ্তর নিয়ে স্কুল থেকে