পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ծԵ বিভূতি-রচনাবলী মলাটওয়ালা অসার বিলিতী নভেল, সিনেমার ম্যাগাজিন ইত্যাদি। অন্যদিকে এখানে বেছে বেছে দেখি, যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়। আজ আর বাছবার মতো ধৈৰ্য্য ছিল না । মনের আকাশের চেহারা আজ ঘসা পয়সার মতে, নীলিমার সৌন্দৰ্য্য তো নেই-ই, মেঘভর বাদল দিনের রূপও নেই—নিতান্তই ঘসা-পয়সার মতো চেহারা । সিনেমা দেখতে যাব ? উট্রাম ঘাটে বেড়াতে যাব ? কোথাও বসে খুব গরম চা খাব ? লেকের দিকে যাব ?— ধৰ্ম্মতলার গির্জার সামনে এক জায়গায় লোকের ভিড় জমেচে । একটা সাহেবী পোশাক-পরা লোক ফুটপাতে অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে, ধডট ও মাথাটা পরস্পরের সঙ্গে এমন অস্বাভাবিক কোণের স্বষ্টি করেচে যে মনে হচ্চে লোকটা মারা গিয়েচে । দুজন সার্জেণ্ট এলো। লোকে বললে, সামনের বাড়ীর নিচের তলায় ওই বাথ-ক্রমের মধ্যে পড়েছিল এই অবস্থায়, বাড়ীর দারোয়ান ধরাধরি করে তার সংজ্ঞাহীন নি:সাড দেহটা একটা টাক্সিতে তুলে নিয়ে কোথায় গেল। .*.' .. লোকটার ওপর সহানুভূতি হ’ল আমার। সেই নিৰ্ব্বোধ বটার ওপর যা হয়নি, এ ৰেহঁশ মাতালের ওপর তা হ’ল। বেচারা আনন্দের খোজে বেরিয়েছিল, পৃথও যা হয় একটা ধরেছিল, হয় তো ভূল পথ, হয় তো সত্যি পথ..আনন্দের সত্যতা তার মাপকাঠি—কে বলবে ওর কি অভিজ্ঞতা, কি তার মূল্য ? ওই জানে। কিন্তু ও তো বেন্থশ ! কার্জন-পার্কের সামনে এলুম। অনেকগুলো চাকর ও আর সাহেবদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে বৃষ্টির ভয়ে গাড়ী-বারান্দার নিচে ফুটপাথের উপরে বসে আছে। বৃষ্টি একটু একটু বাডচে, আমিও সেখানে দাডালুম। একটা ছোট ছেলে, কাকডা বাঁকড়া সোনালী চুল, নীল চোখ, বছর দেড কি দুই বয়েস–সে তার চাকরের টুপিট মাটি থেকে তুলে নিয়ে টলতে টলতে উঠে অতি কষ্টে নাগাল পেয়ে চাকরে মাথায় টুপিটা পরিয়ে দিচ্চে। আর যেমন পরানো যাচ্চে, অমনি হাত নেড়ে, ঘাড দুলিয়ে দন্তহীন মুখে হেসে কুটি-কুট হচ্চে। কিন্তু টুপিটা ভালো করে মাথায় বসাতে পারচে না, একটু পরেই গডিয়ে পড়ে যাচ্চে, আবার খোকা অতি কষ্টে টুপিটা মাথায় তুলে দিচ্ছে আবার সেই হাসি, সেই হাত-পা নাড়, সেই নাচ ! ..তাকে কেউ দেখচে না, কাকর দেখবার সে অপেক্ষাও রাখচে না, তার চাকর পাশ্ববৰ্ত্তিনী আয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলাপে এমন অন্তমনস্ক, থোকা কি করচে না করচে সেদিকে তার আদৌ খেয়াল নেই, নিকটের অন্ত অন্ত ছেলেমেয়েরাও নিতান্ত শিশু—ওই খোকাটি আপন মনে বার বার টুপি পরানো খেলা করচে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে রইলুম। নরম-নরম কচি হাত পায়ের সে কি ছন্দ, কি প্রকাশ —ভঙ্গির কি সজীবতা, কি অবোধ উল্লাস, কি অপূৰ্ব্ব সৌন্দৰ্য্য!..খুশির আতিশয্যে খোক আবার সামনে ঝুঁকে ঝুকে পডেচে, একগাল হাসচে, ছোট ছোট মুঠি-বাধা হাত দুটো একবার তুলচে, একবার নামাচ্চে.শিশুমনের আগ্রহভর উল্লাসের সেকি বিচিত্র, কি মুস্পষ্ট, ভাষাহীন বার্তা ! . . . .