পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8〉や বিভূতি-রচনাবলী একটু পরেই সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। আজ পাচ ছ'মাসের মধ্যে সেখানে আর যাওয়া ঘটে নি—যেমন ঘটে নি আরও কত ওর চেয়েও ভাল জায়গায় যাওয়া—যেখানে যেখানে বাড়ী করবাব অদম্য ইচ্ছা একদিন মনে হঠাৎ জেগেছিল এবং হঠাৎই মিলিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মধ্যে আমার ঝাডগ্রামেব সেই আত্মীয়টিব সঙ্গে দেখা । তিনি বললেন—তুমি কি কোনো সাধুকে জমি কেনার কথা বলেছিলে ? একদিন হাটে আমার সঙ্গে এক সাধুর দেখা । অমীয় বললেন, আপনাদের বার্ডতে এসেছিলেন কলকাতার একটি বাবু, তিনি জমি নেবেন বলেছিলেন। জমি সব ঠিক করে ফেলেছি, তিনি যদি আসেন তবে জমিট লেখাপড়া করিয়ে দিই। ভাবে বুঝলাম, তুমি। মনে পড়লো আরও অনেক জায়গায় অমন জমি নেবে বলেছিলাম। তখন সৌন্দৰ্য্য দেখে ভুলে যাই যে অত জায়গায় বার্ড করবার মত পয়সা নেই আমার হাতে। সেবাব দাৰ্জিলিঙ গিয়ে ভাবলাম ঘুমে একটা বাড়ী না কবলে আর জীবনে ঘুম নেই। কিন্তু যখন জিজ্ঞেস কবে জানা গেল অন্ততঃ ছয় হাজার টাকার কমে ঘুম শহরে বাড়ী হবার জো নেই— তখনই—শত হস্তেন বাজিনাম্। .ঝাড়গ্রাসের আত্মীয়টিব সঙ্গে দেখা হয়েছিল কলকাতায় । ব্ল্যাক-অউিটের কলকাতায় বসে ক্ষণকালের জন্তে চোখেব সামনে ভেসে উঠলে খানাতু,এতুির গ্রন্থে স্ট্রে, জোৎস্নায়াত শালবন ও উদাস প্রান্তর , বনে-ঝোপে অজস্র ফোটা ল্যান্টার্ন ফুল, নানা রং বেরং-এর । এই ফুলটা ওখানকার জঙ্গলে যত দেখেছি তত বাংলাদেশের এ অঞ্চলে কোথাও দেখি নি। তবে আজকাল কিছু কিছু আমদানি হয়েছে, বিশেষত: রেললাইনের ঢালুতে। রেললাইনের *ांनूड অনেক বিদেশী ফুল দেখতে পাওয়া যায়। হয়ত্তো রেলগাড়ীর সাহায্যে ঐ সব বীজ দেশবদেশে কি ভাবে ছড়িয়ে পড়ে—এ ছাড আর কি কারণ থাকতে পারে আমি জানি নে । জানুয়ারী মাস । আমি ঘাটশিলা আছি সে সময়। প্লাশের স্টেশন হোল গালুডি । কয়েকটি বন্ধু সেখানে ইংরজি নববর্ষের উৎসব করবেন, আমাকে তারা নিমন্ত্রণ করেছেন। হেঁটেই রওনা হই । বেশি নয়, ছ মাইল রাস্তা। কিন্তু পথের দৃপ্ত আমার কাছে বেশ ভালই লাগে। উচু রেলপথের বাধ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, ডাইনে মাইল দুই আডাই দূরে এবং বারে মাইল চারেক দূরে রেলপথের সঙ্গে সমান্তবাল শৈলমাল চলেছে বরাবর। ডাইনে সিদ্ধেশ্বর ডুবি শৈলমালা, বাদিকে কালাঝোড। বেলা পড়ে এসেছে। একস্থানে রেলওয়ে কাটিং, অর্থাৎ সেখানে উচু ভাঙার কঠিন পাথরের মধে দিয়ে রেললাইন কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বড় বড় চুণাপাথর ও বালিপাথরের চাই পডে আছে, খুব উচু পাথরের স্তুপ দেখাচ্ছে অনুচ্চ পাহাডের মত। একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। জায়গাটাতে একটু বসে নিলাম। স্বৰ্য্য হেলে পডেছে সিদ্ধেশ্বর ভুরির মোচাকৃতি শিখরদেশের মাথায় । কিছু দূরে জগন্নাথপুর বলে সাওতালী গ্রাম।