পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२९ বিভূতি-রচনাবলী চায়ের টেবিল পাতা হোল –আমি প্রস্তাব করলাম, টেবিল টেনে বাংলোর সামনে সমতল জায়গায় পাতা হোক। রাঙা রোদ মাখানে অরণ্য ও পর্বতশিখরের দিকে চোখ রেখে বসে চা খাওয়া যাক। সত্যিই এমন গম্ভীর অরণ্য-দৃশ্বের মধ্যে চা খাওয়া হয় নি কতকাল। এইy বাংলোর সামনে দিয়ে গভীর রাত্রে কত বন্ত হাতী, বাঘ ভালুক চলে বেড়ায়—গবর্নমেন্টের নোটিশ টাঙানো আছে বেশি রাত্রে বাংলোর বারাদায় কেউ না আসে—এমন নির্জন বস্ত পরিবেশের মধ্যে রুটি, মাখন, চা প্রভৃতি সভ্য খাদ্য খাওয়ার নূতনত্ব আছে বই কি। চা খাওয়ার পরে মিঃ সিংহ বললেন-অন্ধকার হওয়ার দেরি আছে এখনও। চলুন আপনাকে মাছ ধরার বঁাধ দেখাই – আমরা পাহাড়ের নীচে নেমে এলুম, চারিধারে নির্জন ঘন অরণ্যানীর স্তব্ধতা ; কয়েকটি হে-কুলি-মেয়ে লতাপাতা নিয়ে তৈরী কুঁড়েঘরের সামনে বলে,বুনে খেজুর পাতার চেটাই বুনচে । আমরা কাছে গিয়ে দাড়াতেই তাদের কি হাদি অধিয়েঁ-মাজানি না, মি: সিংহ তাদের সঙ্গে তাদের ভাষায় কথাবাৰ্ত্ত বললেন। " আমি বললুম-কি বলছে ওরা ? —বলচে, বাবু এখানে কি দেখতে এসেচ ! —জিজ্ঞেস করুন ওদের নাম কি । —একজনের নাম সামান কুই, একজনের নাম বুধন কুই-কুই অর্থাৎ মেয়ে। — বেশ নাম । ওরা কি খায় ? —শুধু ভাত। না ডাল, না তবকারী, ও সব খেতে জানে না এদেশে । — সারাদিনে কি রোজগার করে ? —চার আন । —এতেই সন্তুষ্ট থাকে ? —খুব । একটু পরে দেখবেন গান করবে সবাই এক সঙ্গে। ওদের মত অল্পে সন্তুষ্ট জাত নেই। মিথ্যা কথা বলতে জানে ন অত্যন্ত সরল। সভ্যতার সম্পর্কে ধারা এসেছে, তারা সবাই দুষ্ট, বদমাইশ হয়ে গিয়েচে। কোনো টাউন বা কারখানার নিকটে ষে সব হো বা ওঁরাও বাস করে, প্রায়ই সব খারাপ ! কিন্তু এ বনের মধ্যে এরা অত্যন্ত সরল, অত্যন্ত সং । ওদের মুখের দিকে চাইলেই সে কথা বোঝা যায়। ছেলেমামুষের মত পবিত্র সরল নিষ্পাপ মুখশ্ৰী। সরলতা ও নির্লোভত ওদের মুখে মুকুমার রেখার অক্ষরে লেখা রয়েচে । মিঃ সিংহ বললেন—আর একটা মজা, এরা বেশী রোজগার করতে চায় না। দিনের সামান্ত মজুরি হাতে পেলেই খুনী। আর কিছুতেই কোনো প্রলোভনেই সেদিন খাটতে চাইবে না। এক জায়গায় সবাই গোল হয়ে বসে চেটাই বুনবে, গান গাইবে। কিন্তু রাচী শহরে গিয়ে এদের দেখুন, অগুরকম দেখবেন। আমরা এগিয়ে গিয়ে একটা বড় ঝর্ণার কাছে এলাম। ঝর্ণার এক দিকে বঁধে বাধা ।