পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 bg বিভূতি-রচনাবলী এ বাজা ভগবান মুখ রক্ষে করলেন। আমার স্ত্রী উঠে পড়তে সবাই উঠলাম সেখান থেকে । বেলা পড়ে এসেছে। চারিধারের বনে এরই মধ্যে সন্ধ্যার ছায়া নেমে আসবার উপক্রম করছে। স্বতরাং বেশীক্ষণ বাইরে থাকা ঠিক হবে না । আমি বললাম—এ জঙ্গলে আমাদের বন্দুক না নিয়ে বেরোনো উচিত নয় কিন্তু। মিঃ সিংহ বললেন—বন্দুক আমাদের আছে, তবে আমরা নিয়ে বেড়াই নে। ও একটা क्झांछे । হরদয়াল সিং বললেন—আমরা ডিপার্টমেন্টের অফিসার মশাই, বাঘ-ভালুকে আমাদের কিছু বলবে না। কয়েকটি হো-মেয়ে পাহাড়ের নীচে ভাত রোধে খুচ্ছে আজও। এরা সারাদিন জঙ্গলে কাজ করে, বাঘ-ভালুকের মুখে। সন্ধ্যাবেলায় নিজেদের জাভানায় ফিরে দুটি নিরুপকরণ তণ্ডুল সিদ্ধ খেয়ে মহানন্মে দিন কাটায়। এতেই ওদের খুশি উপছে পড়েছেশ মামরা ওদের কাছে কিছুক্ষণ বসলাম। কি স্বন্দর জীবন এদের তাই ভাবি। এই যে বাইরের সভ্য জগতে এত যুদ্ধ, খাস্তাভাব, লোকের দুঃখকষ্ট—তার কোন আঁচ এসে এখানে পেছোয় নি। কেরোলিন তেল না পাওয়া গেলেই বা এদের কি, চিনির দাম চালের দাম চড়লেই বা এদের কি; কাপুড়ের দাম বাড়লেই বা এদের কি । এরা ওসব কোনো জিনিসের ধার ধারে না । বনে বাস করে, বনপ্রকৃতিই এদের সমস্ত জিনিস জোগায় ! ওদের জিজ্ঞেস করা হোল-চাল যখন না পাওয়া যায়, তখন কি থাবি ? একটি মেয়ের নাম বুধনি কুই, মেয়েটি বেশ বুদ্ধিমতী বলে মনে হোল তার কথাবাৰ্ত্ত। শুনে। কুই হো-জাতির কুমারী মেয়েদের নামের শেষে ব্যবহার হয়। সে বললে—কেন, বনে খাওয়ার জিনিসের অভাব আছে না কি ? —কি খাবার পাওয়া যায় ? - —কদমূল। কত রকমের কন্দ পাওয়া যায় বনে। যারা জানে তারা তুলে আনে। বর্ষ। কালে আমাদের দু-ঙিন মাস কন্দ খেয়েই চলে যায়। কন্দ কথাটা সংস্কৃত হলেও বেমালুম ঢুকে পড়েছে হো-ভাষার মধ্যে, ‘কান্দ’ রূপে। বাংলা দেশের মেটে আলু জাতীয় একপ্রকার মূল এ জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, ল্যাটিন নাম ‘ডায়াল কোরিয়া’, খেতেও বেশ স্থস্বাদু। এ জাতীয় লতা এই সব বনে সাধারণতঃ শৈল-সাল্লুর অরণ্যে জন্মায়, নিম্নের উপত্যকাতেও কিছু কিছু আছে। আমি হিন্দীতে প্রশ্ন করলুম—তোরা জঙ্গলে কন্দ্ৰ তুলতে স্বাস, বাঘের ভয় করিস নে ? বুধনি কুই কিছু বুঝতে পারে না, শুধুই হাসে। এরা বাংলা তো দূরের কথা হিন্দীও বোঝে না, বিহারে বাস করে। কারণ এদের কাছে বাংলাও নেই, বিহারও নেই—ওসব কথার কোন অর্থ নেই এদের কাছে । এই অরণ্যভূমি এদের মা ; নিজের ক্রোড়ে আশৈশব এদের লালন