পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনে-পাহাড়ে 8©ፃ পরদিন সকালে উঠে আমরা আবার মাছ-ধরার বাধে গিয়ে বসলাম । কত কি বন্যপক্ষীর কৃজন, বনপুষ্পের স্ববাস এই স্থানটিতে, সত্যই বড় ভালো লাগে। কাল রাত্রে হয়তো আমরা যেখানে বসে আছি, সেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার জল খেতে এসেছিল। কংক্রিট বাধানে৷ না হলে নরম মাটিতে বাঘের পায়ের চিহ্ন থাকতো । আমাদের সাড়া পেয়ে একটা বনমোরগ কক্ কক্‌ শব্দ করে বিচিত্র বর্ণের ঝিলিক খেলে উড়ে গভীর বনান্তরালে অদৃপ্ত হোল। আমি আবার বললুম-—এখানে নাইবো ? মিঃ সিংহ বললেন-নাইলেই জর হবে। এসব জল দেখতে ভালো বটে, কিন্তু সম্পূর্ণ অব্যবহার্ষ্য । হিমালয়ের যে কোন ঝর্ণার জল সুপেয় ও নিরাপদ–কিন্তু এখানে তা নয়। আমি যখন প্রথম বনবিভাগের কাজ করতে আসি, অনভিজ্ঞতার দরুন এই সব বন্য নদীর স্বচ্ছ জল নিবিচারে পান করতাম। ফলে ম্যালেরিয়া প্রায়ই হোত। পোড়াইট ও সারেও ফরেস্ট ম্যালেরিয়ার জন্ত বিখ্যাত । আমি বললাম-আপনি কবে বন-বিভাগের চাকরীতে যোগ দেন ? —.৯২৫ সালে। প্রথম যেদিন জঙ্গলে চাকরী করতে আসি, আমি তখন অনভিজ্ঞ যুবক। সবে বি.এস.সি পাশ করেছি পাটনা কলেজ থেকে। আর জেলায় আমার বাড়ী, বনের কোন ধারণাই নেই, আমাদের দেশে দু-দশটা আম গাছ ও মহুয়৷ গাছের সমষ্টিকে বন বলে। বিন্ধ্যাচলে একবার গিয়েছিলাম দাদার সঙ্গে, সেখানে সামান্ত কিছু বন দেখি—তখন তাই আমার নিবিড়তম অরণ্য। আমি কখনো বিন্ধ্যাচল যাই নি, আমার বন্ধু বিভূতি মুখুয্যে সেখানে গিয়ে মাসখানেক ছিলেন। তারই মুখে শুনেছিলাম বিন্ধ্যাচলের মাথায় খুব জঙ্গল, সেখানে হরিণ ইত্যাদি চরে। স্বতরাং আমি বলs ,ম-কেন, শুনেছি সেখানেও বেশ বন আছে । মিঃ সিংহ বললেন—সে এক ধরণের বন। এর তুলনায় কিছুই নয়। আমি প্রথম চাকুরী নিয়ে যাই সারেও ফরেস্টে! সে বন এর চেয়েও ভীষণ । ৪• • বর্গ মাইল অরণ্যানী তার মধ্যে খানকয়েক বগুগ্রাম আছে। বন-বিভাগের কাজকর্মের মজুরের জন্তে গবর্নমেন্ট জমি দিয়ে লোক বসিয়েছে। না দেখলে সে বিরাট অরণ্যের ধারণা হয় না। —তারপর, আপনার অভিজ্ঞতা বলুন শুনি । — সে এক গল্প। এখন খাওয়া- যা শেষ করে নিই চলুন। আজ আমাদের চিটিমিটি যেতে হবে। বৌদিদি তৈরি হয়ে নিন। —চিটিমিটি কতদূর ? — এখান থেকে ৪•৷৪৫ মাইল পাহাড় ও বনের পথ। সকাল সকাল বেরুতে হবে। পথে আমার প্রথম চাকুরী জীবনের গল্প করতে করতে যাবো—আপনাদের লেখার খোরাক হবে । g বেলা দুটোর পরেই আমরা জিনিসপত্র বেঁধে ছেদে মোটরে উঠিয়ে রওনা হোলাম ।