পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনে-পাহাড়ে 88\} এই বরকেলা শৈলমালার বিপজ্জনক নিবিড় বনের মধ্যে দিয়ে মোটর রোড় ঘুরে ঘুরে নীচের সমতলভূমিতে নেমেচে । অন্ধকারের মধ্যে সে পথে মোটরে যাওয়া এক চমৎকার । অভিজ্ঞতা। অগণন জোনাকীপুঞ্জ জলছে গাছের ডালে পাতায় পাতায়। দশ-বিশ হাত অন্তর ফাকা। একপাশে গভীর খাদ। তার পরেই বনাবৃত উপত্যকা। ওপারে একটা বেজায় উচু পাহাড় খাড়া উঠেচে। মোটর খুব জোরে চলতে পারচে না । আমি বললুম—কোন বিপদ নেই তো ? হরদয়াল সিং বললেন-বুনো হাতী ছাড়া । —বুনো হাতীর হাতে পড়েচেন এমন অবস্থায় ? —একবার পড়েছিলুম। এই সংকীর্ণ পথে এমন অন্ধকারে। —বলেন কি?"; —মোটরে যাচ্চি, হাতী সামনে এসে দাড়ালো-আর নড়ে না। মোটর ফেরাবার জায়গা নেই। অগত্য মোটর থামিয়ে দাড়িয়ে রইলাম। হাতী পথের বঁাকে দাড়িয়ে গুড় নাড়তে লাগলো। তারপর অনেকক্ষণ পরে কেন ধে চলে গেল তার কারণ কিছু বলতে পারবে না। সমস্ত রাতও সেখানে গড়িয়ে থাকতে পারতো। মি: সিংহ বললেন—এই সব পথে বিশ্বাস নেই। পরের বাকেই হাতী দাড়িয়ে থাতে পারে - বরকেলা পাহাড়ে হাতীর বড় উপদ্রব । - আমরা পাহাড়ের পথে নামছিলুম। আশে পাশে ঘনীভূত অন্ধকার। নির্জন অরণ্যপথ —গাড়ীদ্ধে অন্ধকারের মধ্যে আমরা চার পাঁচটি প্রাণী, কোনোদিকে লোকালয়ের চিহ্ন দেখা যায় না, দূরে বা নিকটে একটা আলো কোথাও জলে না—কেবল নৈশ আকাশে অগুণন ঝকৃঝকে নক্ষত্ররাজি, গা র ডালে ডালে জোনাকীর বর্ণক, গাড়ীর মধ্যে দু-একটা জলপ্ত সিগারেটের ক্ষীণ দীপ্তি । গল্প যদি শুনতে হয় তবে এই সময় । আমি বললুম-চ আছে ফ্লাস্কে ? মি: সিংহের আরদালি বললে—আছে হজুৰ । আমি প্রস্তাব করলাম-গাড়ী একটা ভাল জায়গা দেখে থামিয়ে চা খাওয়া এবং কিছুক্ষণ বিশ্রাম করা যাক। এই সময়ে মিঃ সি দ্য উীর প্রথম চাকরী জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন। গল্পটা মুলতুবী রয়েছে অনেকক্ষণ থেকে। আরও পনেরো মিনিট পরে দিকে একটা বড় শিলাখণ্ড পাওয়া গেল, যেন সান বাধানে চাতাল। এর পাশে আমাদের গাড়ী থামানে হোল । বেশ আরামে বসে চা খাওয়া গেল, পাথরের চাতালে বসে। পাশের খাদে যেন একরাশ নিবিড় অন্ধকার জমে ? দুঃএকটা নৈশ পাখির ভাক বনের মধ্যে। মিঃ সিংহ বললেন-সে হোল ১৯২২ সালের কথা ৮ সে বারে আমি প্রথম বন-বিভাগে ট্রেনিং-এ গেলাম। অর্ডার পেলাম, পোংলাতে গিয়ে বন-বিভাগের কৰ্ম্মচারীর কাছে কাজ শিখতে হবে।