পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনে-পাহাড়ে 88% মাইল ছ-সাত পরে কোল-বোংসা গ্রামে পৌছে গেলাম। উনি বললেন—চলুন, এ." গ্রামে যেখানে রাত্রি যাপন করেছিলাম দেখিয়ে আনি । মোটর থেকে নেমে আমরা একটা পাহাডের ওপর উঠলাম। সেই পাহাড়ের মাথার ওপব ক্ষুদ্র একটি কুটিরের সামনে এক বৃদ্ধ লোক খামারে ধান ঝাড়চে, কুমড়োর লতা উঠেচে কুটিরের খড়-ছাওয়া চালের ওপর , কুটিরের দাওয়া থেকে সম্মুখের সারাও-বনকাস্তারের শৈল-শ্রেণীর গম্ভীর দৃপ্ত হিমালয়ের পাৰ্ব্বত্যভূমির সৌন্দর্ঘ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। হিংসে হোল বৃদ্ধ ব্যক্তিটির ওপর, এমন সুন্দর জায়গায় ওর বাড়ী। মি: সিংহ তাকে বললেন-কি জাত ? লোকটু বললে-গোসাই'। অর্থাৎ ব্রাহ্মণ। এ দেশে ব্রাহ্মণকে বলে গোসাঁই’। এতক্ষণ লক্ষ করি নিঃ dৈতে ঝুলচে বটে। লে গুহাড় থেকে আমরা ওঙ্কারের সমতলভূমিতে নৈমে আসল গ্রামে cशोकूलयि । গ্রামের প্রান্তে একটা ভাঙা কুঁড়েঘর দেখিয়ে মিঃ সিংহ বললেন– এই ঘরে সেদিন রাত কাটিয়েছিলাম । কুটিরটির চারধারে বড় বড় শালগাছ, একটু দূরে একটা কালো পাথরের క్రైగ ক্ষুত্র পাহাড়। সে পাহাড়ের উপর শালগাছের সঙ্গে লতা-পলাশের (Buteasuperba ‘জভাজড়ি। বসন্তকালে বক্ত পলাশের মেলা যখন শুরু হয়ে যাবে বনে বনে, তখন যে কোনো কবি, সাহিত্যিক, ভাবুকের পক্ষে কিংবা ভগবানের চিন্তায় মগ্ন সাধুর পক্ষে এই নিভৃত বনকুঠুরী কুটিরটি অতি লোভনীয় হবে সন্দেহ নেই। কোল বোংলা গ্রামে বাস করে হো-জাতীয় অধিবাসীরা, ঘরদেীর তাদের অত্যন্ত খারাপ —নিতান্ত দীনহীন, কিন্তু ক’বা এক রমণীয় পাৰ্ব্বত্য দৃশ্বের মধ্যে সৰ্ব্বদা থাকে, ওদের কুটিরের দাওয়ায় বসলে নীল শৈলমাল ও বনকান্তরেব কি শোভন রূপটিই চোখের সামনে ফুটে ওঠে। অনেক বড়লোকের বাড়ী হ তো কোনো এদো গলির মধ্যে এক ইটের স্তুপ মাত্র, দরজাব একপাশে দেখা যাবে ডাস্টবিন, গোটাকতক কাক আব খেকিকুকুর আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্চে - এমন নীল বনানীর শোভা, এমন রক্তপলাশের উৎসব সেখানে কোথায় ? কোল-বোংসা গ্রাম ছেড়ে মহাদেবশাল বলে একটি পাৰ্বত্য নদী নিবিড় বনের মধ্যে বড় বড় পাথরের ওপর দিয়ে কুলুকুলু শব্দ করে বয়ে চলেচে। নিভৃত ছায়াবিতান রচনা করেচে সারাও অরণ্যপ্রান্ত । এখান থেকেই চড়াইয়ের পথে মোটর উঠতে লাগলো। পরক্ষণেই কি নিবিড় বন শুক হোল রাস্তার দিকে, কি দূর সমতল ভূমির দৃপ্ত। এই রে মনোহরপুব ইষ্টিশান, ওই ট্রেনের ধোয় উড়চে, ওঁই সেই কোল-বোংসা গ্রামে ছোট্ট , পাহাড়ের ওপর গোসাইয়ের কুটির ও খামার। এক এক জায়গায় বনের গভীর দৃপ্ত মনে ভয়ের সঞ্চার করে, তবুও আমরা মোটরে চলচি, সঙ্গে এতগুলো লোক। কিন্তু একটি অনভিজ্ঞ যুবক যেনি এই বন্যজন্তু-অধ্যুষিত অরণ্যভূমির মধ্য দিয়ে এক সাইকেলে গিয়েছিল, তার সেদিনকার মনের অবস্থা বেশ বুঝতে পারলাম।