পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী فوبيا তার ভয়ে যত গাঙ্গেীত আর চাষী ও চরির প্রজা জুজু হয়ে থাকত। দেবী সিং-এর ব্যবসা ছিল খুব চড়া মুদে টাকা ধার দেওয়া এই সব লোককে—আর তার পর লাঠিবাজি করে মুদ আসল টাকা আদায় করা। তার তাবে আট-ন জন লাঠিয়াল পাইকই ছিল। এখন যেমন রাসবিহারী সিং রাজপুত এ-অঞ্চলের মহাজন, তখন ছিল দেবী সিং । ৰীে নমােনগুলো থেকে টপূর্ণা বাস করে । তার পর টাকা ধার দিয়ে জোর-জবরদস্তি করে এ দেশের যত ভীতু গাঙ্গোত প্রজাদের হাতের মুঠোয় পুরে ফেললে। এখানে আসবার বছর কয়েক পরে সে কাশী যায় এবং সেখানে এক বাইজীর বাড়ী গান শুনতে গিয়ে তার চোঁদ-পনের বছরের মেয়ের সঙ্গে দেবী সিং-এর খুব ভাব হয়। তার পর তাকে নিয়ে দেবী সিং পালিয়ে এখানে আসে। দেবী সিং-এর বয়স সীতাস-আটাশ হবে। এখানে এসে দেবী সিং তাকে বিয়ে করে । কিন্তু বাইজীর মেয়ে বলে সবাই যখন জেনে ফেললে, তখন দেবী সিং-এর নিজের জাতভাই রাজপুতরা ওর সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে ওকে এক ঘরে করলে। পয়সার জোরে দেবী সিং সে সব গ্রাহ করত না। তার পর বাবুগিরি আর ' অযথা ব্যয় করে এবং এই রাসবিহারী সিং-এর সঙ্গে মকদ্দমা করতে গিয়ে দেবী সিংসৰ্ব্বস্বাস্ত হয়ে গেল। আজ বছর চারেক হল সে মারা গিয়েছে । ঐ কুস্তাই দেবী সিং রাজপুতের সেই বিধবা স্ত্রী। এক সময়ে ও লবটুলিয়া থেকে কিংখাবের ঝালর-দেওয়া পালকি চেপে কুশী ও কলবলিয়ার সঙ্গমে স্নান করতে যেত, বিকানীর মিছর খেয়ে জল থেত—আজ ওর ওই দুৰ্দ্দশা! আরও মুশকিল এই যে বাইজীর মেয়ে সবাই জানে বলে ওর এখানে জাত নেই, তা কি ওর স্বামীর আত্মীয়-বন্ধু রাজপুতদের মধ্যে, কি দেশওয়ালী গাঙ্গেণতাদের মধ্যে । ক্ষেত থেকে গম কাট হয়ে গেলে যে গমের গুডে শীষ পড়ে থাকে, তাই টুকরি করে ক্ষেতে ক্ষেতে বেডিয়ে কুড়িয়ে এনে বছরে দু-এক মাস ও ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের আধপেটা খাইয়ে রাখে । কিন্তু কখনও হাত পেতে ভিক্ষে করতে ওকে দেখি নি হুজুর। আপনি এসেছেন জমিদারের ম্যানেজার, রাজার সমান, আপনার এখানে প্রসাদ পেলে ওর তাতে অপমান নেই। বলিলাম—ওর মা, সেই বাইজী, ওর খোজ করে নি তার পর কখনও ? পাটোয়ারী বলিল—দেখি নি তো কখনও হুজুর। কুন্তীও কখনও মায়ের খোজ করে নি। ও-ই দুঃখ-ধানা করে ছেলেপুলেকে খাওয়াচ্ছে। এখন ওকে কি দেখছেন, ওর এক সময় যা রূপ ছিল, এ-অঞ্চলে সে রকম কখনও কেউ দেখে নি। এখন বয়েসও হয়েছে, আর বিধবা হওয়ার পরে দুঃখে-কষ্টে সে চেহারার কিছু নেই। বড় ভাল আর শাস্ত মেয়ে কুন্তা। কিন্তু এদেশে ওকে কেউ দেখতে পারে না, সবাই নাক সিটকে থাকে, নীচু চোখে দেখে, বোধ হয় বাইজীর মেয়ে বলে । বলিলাম—তা বুঝলাম, কিন্তু এই রাত বারোটার সময় এই ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ও এক লবটুলিয়া বস্তিতে যাবে—সে ত এখান থেকে প্রায় তিন পোৱা পথ ? —ওর কি ভয় করলে চলে হুজুর ? এই জঙ্গলে হরবখত, ওকে একলা ফিরতে হয়। }