পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক లిసి নইলে কে আছে ওর, যে চালাবে ? তখন ছিল পৌষ মাস, পৌষ-কিস্তির তাগাদ শেষ করিয়াই চলিয়া আসিলাম। মাঘ মাসের মাঝামাঝি আর একবার একটা ক্ষুদ্র চরি মহাল ইজারা দিবার উদেখে লবটুলির যাওয়ার প্রয়োজন হইয়াছিল। * তখনও শীত কিছুমাত্র কমে নাই, তার উপরে সারাদিন পশ্চিম বাতাস বহিবার ফলে প্রত্যহ সন্ধ্যার পরে শীত দ্বিগুণ বাড়িতে লাগিল। একদিন মহালের উত্তর সীমানায় বেড়াইতে কাছারি হইলে অনেক দূরে গিয়া পড়িয়াছি—সেদিকটাতে বহুদূর পর্যন্ত শুধু কুলগাছের জঙ্গল। এই সব জঙ্গল জমা লইয়া ছfপর ও মজঃফরপুর জেলার কালোয়ার-জাতীয় লোকে লাক্ষার চাষ করিয়া বিস্তর পয়সা উপাৰ্জ্জন করে। কুলের জঙ্গলের মধ্যে প্রায় পথ ভুলিবার উপক্রম করিয়াছি, এমন সময় হঠাৎ একটা নারীকণ্ঠে আৰ্ত্তক্ৰন্দনের শব, বালক-বালিকার গলার চীৎকার ও কান্না এবং ককশ পুরুষ-কণ্ঠে গালিগালাজ শুনিতে পাইলাম। কিছুদূর অগ্রসর হইরা দেখি, একটি মেয়েকে লাক্ষার ইজারাদারের চাকরের চুলের মুঠি ধরিয়া টানিয়া লইয়া আসিতেছে । মেয়েটির পরনে ছিন্ন মলিন বস্ত্র, সঙ্গে দু'তিনটি ছোট ছোট রোরুদ্যমান বালকবালিকা, দুজন ছত্রি চাকরের মধ্যে একজনের হাতে একটা ছোট ঝুড়িতে আধঝুড়ি পাকা কুল । আমাকে দেখিয়া ছত্রি দুজন উৎসাহ পাইয়া যাহা বলিল তাহার অর্থ এই যে, তাহাদের ইজারকের জঙ্গলে এই গাঙ্গোতিন চুরি করিয়া কুল পাড়িতেছিল বলিয় তাহাকে কাছারিঔে পাটোয়ারীর বিচারার্থ ধরিয়া লইয়া যাইতেছে, হুজুর আসিয়া পড়িয়াছেন, ভালই হইয়াছে। প্রথমেই ধমক দিয়া মেয়েটিকে তাহীদের হাত হইতে ছাড়াইলাম। মেয়েটি তখন ভরে লজ্জায় জড়সড় হইয়া একটি কুলঝোপের আডালে গিয়া দাড়াইয়াছে। তাহার দুর্দশা দেখিয়া এত কষ্ট হইল ! ইজারাদারের লোকেরা কি সহজে ছাড়িতে চায়! তাহদের বুঝাইলাম—বাপু, গরীব মেয়েমানুষ যদি ওর ছেলেপুলেকে খাও ইবার জন্য আধঝুড়ি টক কুল পাড়িয়াই থাকে, তাহাতে তোমাদের লাক্ষাচাষের বিশেষ কি ক্ষতিটা হইয়াছে। উহাকে বাড়ী যাইতে দাও। - একজন বলিল—জানেন না হুজুর, ওর নাম কুন্ত, এই লবটুলিয়াতে ওর বাড়ী, ওর অভ্যেস চুরি করে কুল পাড়া। আরও একবার আর-বছর হাতে হাতে ধরেছিলাম—ওকে এবার শিক্ষণ না দিয়ে দিলে— প্রায় চমকিয়া উঠিলাম। কুন্তী ! তাহাকে তো চিনি নাই ? তাহার একটা কারণ, দিনের আলোতে কুন্তাকে তো দেখি নাই, যাহা দেখিয়াছি রাত্রে। ইজারাদারের লোকজনকে তৎক্ষণাৎ শাসাইয়া কুন্তাকে মুক্ত করিলাম। সে লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশিয়া ছেলেপুলেদের লইয়া বাড়ী চলিয়া গেল। যাইবার সময় কুলের ধামাটি ও অঁাকৃশিগাছটা সেখানেই ফেলিয়া গেল। বোধ হয় ভয়ে ও সঙ্কোচে । আমি উপস্থিত লোকগুলির মধ্যে একজনকে সেগুলি কাছারিতে লইয়া যাইতে বলতে তাহারা খুব খুশী হইয়া ভাবিল ধামা ও আকৃশি সরকারে নিশ্চয়ই বাজেয়াপ্ত হইবে। কাছারিতে আসিয়া পাটোয়ারীকে বলিলাম—তোমাদের দেশের