পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8や বিভূতি-রচনাবলী আছে, বিশেষত পাকা কুলের সময়, এখন ভালুক তো নিশ্চয়ই বাহির হইবে, কারে নদীর ওপারে মহালিখণরূপের জঙ্গলে এই তো সেদিনেও এক গরুর গাড়ীর গাড়োয়ানকে বাঘে লইয়াছে, বেচারী জঙ্গলের পথে একা আসিতেছিল। অসম্ভব, হুজুর। রাত্রে এখানে থাকুন, খাওয়া-দাওয়া করুন, যখন দয়া করিয়া আসিয়াছেন গরীবের ডেরায় । কাল সকালে তখন ধীরে-সুস্থে গেলেই হইবে। এ বাসন্তী পূর্ণিমায় পরিপূর্ণ জ্যোৎস্নারাত্রে জনহীন পাহাড জঙ্গলের পথ এক ঘোড়ায় চড়িয়া যাওয়ার প্রলোভন আমার কাছে দুৰ্গমনীয় হইয়া উঠিল। জীবনে আর কখনও হইবে না, এই হয়ত শেষ, আর যে অপূৰ্ব্ব বন-পাহাড়ের দৃশ্ন দেখিয়া আসিয়াছি পথে । জ্যোৎস্নারাত্রে—বিশেষত পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় তাহীদের রূপ একবার দেখিব না যদি, তবে এতটা কষ্ট করিয়া আসিবার কি অর্থ হয় ? সকলের সনিৰ্ব্বন্ধ অনুরোধ এড়াইয়া রওনা হইলাম। ব্রহ্ম মাহাতে ঠিকই বলিয়াছিল, কারো নদীতে পৌছিবার কিছু পূৰ্ব্বেই টকটকে লাল মুবৃহৎ স্বৰ্য্যটা পশ্চিম দিক্‌চক্রবালে একটা অনুচ্চ শৈলমালার পিছনে অস্ত গেল। কারো নদীর তীরের বালিয়াড়ির উপর যখন ঘোড়ামুদ্ধ উঠিয়াছি, এইবার এখান হইতে ঢালু বালির পথে নদীগর্ভে নামিব—হঠাৎ সেই স্বৰ্য্যাস্তের দৃপ্ত এবং ঠিক পূৰ্ব্বে বহু দূরে কৃষ্ণ রেখার মত পরিদৃশ্যমান মোহনপুরা রিজার্ড ফরেস্টের মাথায় নবোদিত পূর্ণচন্দ্রের দৃশু—যুগপৎ এই অস্ত ও উদয়ের দৃশ্বে থমকিয়া ঘোড়াকে লাগাম কষিয়া দাড করাইলাম। সেই নিৰ্জ্জন অপরিচিত নদীতীরে সমস্তই যেন একটা অবাস্তব ব্যাপারের মত দেখাইতেছে— পথে সৰ্ব্বত্র পাহাড়ের ঢালুতে ও ডাঙায় ছাড়া-ছাড়া জঙ্গল, মাঝে মাঝে সরু পথটাকে যেন দুই দিক হইতে চাপিয়া ধরিতেছে, আবার কোথাও কিছুদূরে সরিয়া যাইতেছে। কি ভয়ঙ্কর নিজন চারিদিক, দিনমানে যা-হয় একরূপ ছিল, জ্যোৎস্না উঠিবার পর মনে হইতেছে যেন অজানা ও অদ্ভুত সৌন্দৰ্য্যময় পরীরাজ্যের মধ্য দিয়া চলিয়াছি। সঙ্গে সঙ্গে বাঘের ভয়ও হইল, মনে পড়িল মেলায় ব্রহ্মা মাহীতে এবং কাছারিতে প্রায়-সকলেই রাত্রে এপথে একা আসিতে বারবার নিষেধ করিয়াছিল, মনে পড়িল নন্দকিশোর গোসাই নামে আমাদের একজন বাথানদার প্রজা আজ মাস দুই-তিন আগে কাছারিতে বসিয়া গল্প করিয়াছিল এই মহালিখণরূপের জঙ্গলে সেই সময় কাহাকে বাঘে খাওয়ার ব্যাপার। জঙ্গলের এখানে-ওখানে বড় বড় কুলগাছে কুল পাকিয়া ডাল নত হইয়া আছে—তলায় বিস্তর শুক্নো ও পাক কুল ছড়ানো—সুতরাং ভালুক বাহির হইবারও সম্ভাবনা খুবই। বুনো মহিষ এ বনে না থাকিলেও মোহনপুরা জঙ্গল হইতে ওবেলার মত এক-আধটা ছিটকাইয়া আসিতে কতক্ষণ! সম্মুখে এখনও পনের মাইল নিৰ্জ্জন বনপ্রান্তরের উপর দিয়া পথ । ভয়ের অনুভূতি চারি পাশের সৌন্দৰ্য্যকে যেন আরও বাড়াইয়া তুলিল। এক এক স্থানে পথ দক্ষিণ হইতে খাড়। উত্তরে ও উত্তর হইতে পূৰ্ব্বে ঘুরিয়া গিয়াছে, পথের খুব কাছে বাম দিকে সৰ্ব্বত্রই একটানা অমুচ্চ শৈলমাল, তাদের ঢালুতে গোলাগোলি ও পলাশের জঙ্গল,