পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ն* বিভূতি-রচনাবলী —কি জমাদার, কি ব্যাপার ? —হুজুর, দক্ষিণ দেশে এবার ধান মরে যাওয়াতে অজন্ম হয়েছে, লোকে চালাতে না পেরে দেশে দেশে নাচের দল নিয়ে বেরিয়েছে। ওরা কাছারিতে হুজুরের সামনে নাচবে বলে এসেছে, যদি হুকুম হয় তবে নাচ দেখার। নাচের দল আমার আপিস-ঘরের সামনে আসিয়া দাড়াইল । মুক্তিনাথ সিং জিজ্ঞাসা করিল, কোন নাচ তাহারা দেখাইতে পারে। দলের মধ্যে একজন ষাট-বাষটি বছরের বৃদ্ধ সেলাম করিয়া বিনীতভাবে বলিল—হুজুর, হে হো নাচ আর ছক্কর-বাজি নাচ । দলটি দেখিয়া মনে হইল নাচের কিছু জামুক না-জামুক পেটে দুটি খাইবার আশায় সব ধরণের, সব বয়সের লোক ইহার মধ্যে ঢুকিয়া পড়িয়াছে। অনেকক্ষণ ধরিয়া তাহারা নাচিল ও গান গাহিল। বেলা পড়িবার সময় তাহারা আসিয়াছিল, ক্রমে আকাশে জ্যোৎস্না ফুটিল, তখনও তাহারা ঘুরিয়া ঘুরিয়া হাত ধরিয়া নাচিতেছে ও গান-গাহিতেছে। অদ্ভূতধরণের নাচ ও সম্পূর্ণ অপরিচিত স্বরের গান। এই মুক্ত প্রকৃতির বিশাল প্রসার ও এই সভ্য জগৎ হইতে বহুদূরে অবস্থিত নিভৃত বন্ত আবেষ্টনীর মধ্যে এই দিগন্তপরিপ্লাবী ছায়াবিহীন জ্যোৎস্নালোকে এই নাচ-গানই চমৎকার খাপ খায়। একটি গানের অর্থ এইরূপ :–

  • শিশুকালে বেশ ছিলাম । আমাদের গ্রামের পিছনে যে পাহাড়, তার মাথায় কেঁদ বন, সেই বনে কুড়িয়ে বেড়াতাম পাকা ফল, গাথতাম পিয়াল ফুলের মালা ।

দিন খুব সুখেই কাটত, ভালবাসা কাকে বলে, তখন জানতাম না । পাচ-নহুরী ঝরণার ধীরে সেদিন কররা পার্থী মারতে গিয়েছি । হাতে আমার বাশের নল ও আঠ-কাঠি । তুমি কুসুম-রঙে ছাপানো শাড়ী পরে এসেছিলে জল ভরতে। দেখে বললে—ছি, পুরুষমানুষে কি সতি-নলি দিয়ে বনের পার্থী মারে! আমি লজ্জায় ফেলে দিলাম বঁাশের নল, ফেলে দিলাম আঠা-কাঠির তাড়া । বনের পার্থী গেল উড়ে, কিন্তু আমার মন-পার্থী তোমার প্রেমের ফদে চিরদিনের মত যে ধরা পড়ে গেল ! আমায় সাত-নলি চেলে পাখী মারতে বারণ করে এ কি করলে তুমি আমার! কাজটা কি ভাল হল সখি ? ওদের ভাষা কিছু বুঝি, কিছু বুঝি না । গানগুলি সেই জন্তই বোধ হয় আমার কাছে আরও অদ্ভূত লাগিল। এই পাহাড় ও পিয়ালবনের স্বরে বাধা এদের গান, এখানেই ভাল লাগিবে । ইহাদের দক্ষিণা মাত্র চার আনা পয়সা । কাছারির আমলার একবাক্যে বলিল—হজুর, তাই অনেক জায়গায় পায় না, বেশী দিয়ে ওদের লোভ বাড়াবেন না, তা ছাড়া বাজার নষ্ট