পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ X জঙ্গলের বিভিন্ন অংশ সার্ভে হইতেছিল। কাছারি হইতে তিন ক্রোশ দূরে বোমাইবুন্ধর জঙ্গলে আমাদের এক আমীন রামচন্দ্র সিং এই উপলক্ষে কিছুদিন ধরিয়া আছে। সকালে খবর পাওয়া গেল রামচন্দ্র সিং হঠাৎ আজ দিন দুই-তিন হইল পাগল হইয়া গিয়াছে। শুনিয়া তখনই লোকজন লইয়া সেখানে গিয়া পৌছিলাম। বোমাইবুরুর জঙ্গল খুব নিবিড় নয়, খুব ফাকা উঁচু-নীচু প্রাস্তরে মাঝে মাঝে বড় বড় গাছ, ডাল হইতে সরু দড়ির মত লতা ঝুলিতেছে, যেন জাহাজের উচু মাস্তলের সঙ্গে দড়াদড়ি বাধা। বোমাইবুরুর জঙ্গল সম্পূর্ণরূপে লোকবসতি-শূন্ত। গাছপালার নিবিড়ত হইতে দূরে ফাকা মাঠের মধ্যে কাশে ছাওয়া ছোট দুখানা কুঁড়ে। একখানা একটু বড়, এখানাতে রামচন্দ্র আমীন থাকে, পাশের ছোটখানায় তার পেয়াদী আসরফি টিণ্ডেল থাকে। রামচন্দ্র নিজের কাঠের মাচার উপর চোখ বুজিয়া শুইয়া ছিল । আমাদের দেখিয়া ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিল । জিজ্ঞাসা করিলাম—কি হয়েছে রামচন্দ্র ? কেমন আছ ? রামচন্দ্ৰ হাতজোড় করিয়া নমস্কার করিয়া চুপ করিয়া রহিল। কিন্তু আসরফি টিণ্ডেল সে কথার উত্তর দিল। বলিল—বাবু একটা বড় আশ্চৰ্য্য কথা । আপনি শুনলে বিশ্বাস করবেন না। আমি নিজেই কাছারিতে গিয়ে খবর দিতাম, কিন্তু আমীনবাবুকে ফেলে যাই বা কি করে ? ব্যাপারটা এই, আজ ক'দিন থেকে আমীনবাৰু বলছেন একটা কুকুর এসে রাত্রে তাকে বড় বিরক্ত করে। আমি শুই এই ছোট ঘরে, আমীন বাৰু শুয়ে থাকেন এখানে। দু-তিনদিন এই রকম গেল । রোজই উনি বলেন—আরে কোথেকে একটা সাদা কুকুর আসে রাত্রে। মাচার ওপর বিছানা পেতে শুই, কুকুরটা এসে মাচার নীচে কেঁউ কেউ করে, গায়ে ঘোষ দিতে আসে। শুনি, বড়-একটা গা করি নে। আজ চারদিন আগে উনি অনেক রাত্রে বললেন—আসরকি, শীগগির এসে বেরিয়ে, কুকুরটা এসেছে। আমি তার লেজ চেপে ধরে রেখেছি। লাঠি নিয়ে এস। আমি ঘুম ভেঙে লাঠি-আলো নিয়ে ছুটে যেতে দেখি—বললে বিশ্বাস করবেন না হুজুর, কিন্তু হুজুরের সামনে মিথ্যে বলব এমন সাহস আমার নেই-একটি মেয়ে ঘরের ভিতর থেকে বার হয়ে জঙ্গলের দিকে চলে গেল। আমি প্রথমটা থভমত থেয়ে গেলাম। তার পর ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখি আমীনবাব বিছানা হাতড়ে দেশলাই খুঁজছেন। উনি বললেন— কুকুরটা দেখলে ? আমি বললাম-কুকুর কই বাবু, একটা কে মেয়ে তো বার হয়ে গেল। উনি বললেন—উল্লুক, আমার সঙ্গে বেয়াদবি ? মেয়েমানুষ কে আসবে এই জঙ্গলে