পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক Q> দুপুর রাতে ? আমি কুকুরটার লেজ চেপে ধরেছিলাম, এমন কি তার লম্বা কান আমার গায়ে ঠেকেছে। মাচার নীচে ঢুকে কেউ কেঁউ করছিল। নেশা করতে শুক করেছ বুঝি ? রিপোর্ট করে দেব সদরে। পরদিন রাত্রে আমি সজাগ হয়ে ছিলাম অনেক রাত পৰ্য্যস্ত। যেই একটু ঘুমিয়েছি আমনি আমীনবাৰু ডাকলেন। আমি তাড়াতাডি ছুটে বেরিয়ে আমার ঘরের দোর পর্য্যন্ত গিয়েছি, এমন সময় দেখি একটি মেয়ে ওঁর ঘরের উত্তর দিকের বেডার গা বেয়ে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে । তখনই হুজুর আমি নিজে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকলাম। অতটুকু সময়ের মধ্যে লুকোবে কোথায়, যাবেই বা কত দূর ? বিশেষ করে আমরা জঙ্গল জরীপ করি, অন্ধি-সন্ধি সব আমাদের জানা। কত খুঁজলাম বাৰু, কোথাও তার চিহ্নটি পাওয়া গেল না। শেষে আমার কেমন সন্দেহ হল, মাটিতে আলো ধরে দেখি কোথাও পায়ের দাগ নেই, আমার নাগরা জুতোর দাগ ছাড়া । আমীনবাবুকে আমি একথা বললাম না আর সেদিন। এক দুটি প্রাণী থাকি এই ভীষণ জঙ্গলের মধ্যে হুজুর। ভয়ে আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। আর বোমাইবুরু জঙ্গলের একটু দুর্নামও শোনা ছিল। ঠাকুরদাদর মুখে শুনেছি, বোমাইবুরু পাহাডের উপর ওই যে বটগাছটা দেখছেন দুর—একবার তিনি পূর্ণিয়া থেকে কলাই বিক্রির টাকা নিয়ে জ্যোৎস্নাTরাত্রে ঘোডীয় করে জঙ্গলের পথে ফিরছিলেন , ওই বটতলায় এসে দেখেন একদল অল্পবয়সী সুন্দরী মেয়ে হাত-ধরাধরি করে জ্যোৎস্নার মধ্যে নাচছে। এদেশে বলে ওদের ‘ডামাবাণু – এক ধরণের জীনপরী, নির্জন জঙ্গলের মধ্যে থাকে। মানুষকে বেঘোরে পেলে মেরেও ফেলে । হুজুর, পরদিন রাত্রে আমি নিজে আমীনবাবুর র্তাবুতে শুয়ে জেগে রইলাম সারারাত । সারারাত জেগে জরীপের থাকবন্দীর হিসেব কষতে লাগলাম। বোধ হয় শেষ রাতের দিকে একটু তন্দ্র এসে থাকবে—হ১,১ কাছেই একটা কিসের শব্দ শুনে মুখ তুলে চাইলাম—দেখি আমীন সাহেব ঘুমুচ্ছেন ওঁর খাটে, আর খাটের নীচে কি-একটা ঢুকেছে। মাথা নীচু করে থাটের নীচে দেখতে গিয়েই চমকে উঠলাম। অধি-আলো আধ-অন্ধকারে প্রথমটা মনে হল একটি মেয়ে যেন গুটি-মুটি মেরে থাটের তলায় বসে আমার দিকে হাসিমুখে চেয়ে আছে— স্পষ্ট দেখলাম হুজুর, আপনার পায়ে হাত দিয়ে বলতে পারি। এমন কি, তার মাথায় বেশ কালে চুলের গোছ পৰ্য্যন্ত স্পষ্ট দেখছি। লণ্ঠনটা ছিল যেখানটাতে বসে হিসেব কষছিলাম সেখানে-হাত ছ সাত দূরে। আরও ৬% করে দেখব বলে লণ্ঠনটা যেমন আনতে গিয়েছি, কি একটা প্রাণী ছুটে থাটের তলা থেকে বেরিয়ে পালাতে গেল,-দোরের কাছে লন্ঠনের আলোটা বাকী ভাবে পডেছিল, সেই আলোতে দেখলাম একটা বড় কুকুর, কিন্তু তার আগাগোডা সাদা, হুজুর, কালোর চিহ্ন কোথাও নেই তার গায়ে । আমীন সাহেব জেগে বললেন–কি, কি ? বললাম—ও কিছু নয়, একটা শেয়াল কি কুকুর ঘরে ঢুকেছিল। আমীন সাহেব বললেন–কুকুর ? কি রকম কুকুর ? বললাম— সাদা কুকুর। আমীন সাহেব যেন একটা নিরাশার স্বরে বললেন-সাদা ঠিক দেখেছ ? না কালো ? বললাম—না, সাদাই হুজুর।