পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q& বিভূতি-রচনাবলী . আমি একটু বিস্মিত যে না হয়েছিলাম এমন নয়—সাদা না হয়ে কালো হলেই বা আমীনবাবুর কি সুবিধা হবে তাতে বুঝলাম না । উনি ঘুমিয়ে পড়লেন–কিন্তু আমার যে কেমন একটা ভয় ও অস্বস্তি বোধ হল কিছুতেই চোখের পাতা বোজাতে পারলাম না। খুব সকালে উঠে থাটের নীচেটা একবার কি মনে করে ভাল করে খুঁজতে গিয়ে সেখানে একগাছা কালে চুল পেলাম। এই সে চুলও রেখেছি, হুজুর। মেয়েমানুষের মাথার চুল। কোথা থেকে এল এ চুল ? দিব্যি কালো কুচকুচে নরম চুল। কুকুর—বিশেষতঃ সাদা কুকুরের গায়ে এত বড়, নরম কালো চুল হয় না । এ হল গত রবিবার অর্থাৎ আজ তিন দিনের কথা । এই তিন দিন থেকে আমীন সাহেব তো এক রকম উন্মাদ হয়েই উঠেছেন । আমার ভয় করছে হুজুর—এবার আমার পাল| কিনা তাই ভাবছি। গল্পটা বেশ আষাঢ়ে-গোছের বটে। সে চুলগাছি হাতে করিয়া দেখিয়াও কিছু বুঝিতে পারিলাম না । মেয়েমানুষের মাথার চুল, সে-বিষয়ে আমারও কোন সন্দেহ রহিল না । আসরফি টিগুেল ছোকরা মানুষ, সে যে নেশা-ভাঙ কবে না, একথা সকলেই একবাক্যে বলিল । জনমানবশূন্ত প্রান্তর ও বনঝোপের মধ্যে একমাত্র তাবু এই আর্মীনের নিকটতম লোকালয় হইতেছে লবটুলিয়া—ছয় মাইল দূরে। মেয়েমানুষই বা কোথা হইতে আসিতে পারে অত গভীর রাত্রে—বিশেষ যখন এই সব নির্জন বনপ্রান্তরে বাঘ ও বুনোগুয়োরের ভয়ে সন্ধ্যার পরে আর লোকে পথ চলে না ? যদি আসরফি টিণ্ডেলের কথা সত্য বলিয়া ধরিয়া লই, তবে ব্যাপারটা খুব রহস্যময়। অথবা এই পাণ্ডববর্জিত দেশে, এই জনহীন বনজঙ্গল, ও ধূ-ধূ প্রান্তরের মধ্যে বিংশ শতাব্দী তো প্রবেশের পথ খুজিয়া পায়ই নাই-উনবিংশ শতাব্দী ও পাইয়াছে বলিয়া মনে হয় না। অতীত যুগের রহস্যময় অন্ধকারে এখনও এসব অঞ্চল আচ্ছন্ন—এখানে সবই সম্ভব। সেখানকার তাবু উঠাইয়। রামচন্দ্র আমীন ও আসরফি টিগুেলকে সদর কাছারিতে লইয়া আসিলাম। রামচন্দ্রের অবস্থা দিন দিন খারাপ হইতে লাগিল, ক্রমশ সে ঘোর উন্মাদ হইয়া উঠিল। সারারাত্রি চীৎকার করে, বকে, গান গায়। ডাক্তার আনিয়া দেখাইলাম, কিছুতেই কিছু হইল না, অবশেষে তাহার এক দদা আসিয় তাহাকে লইয়া গেল । এই ঘটনার একটা উপসংহার আছে, যদিও তাহা ঘটিরাছিল বৰ্ত্তমান ঘটনার সাত-আট মাস পরে, তবুও এখানেই তাহ বলিয়া রাখি। # এ ঘটনার ছ-মাস পরে চৈত্র মাসের দিকে দুটি লোক কাছারিতে আমার সঙ্গে দেখা করিল। একজন বৃদ্ধ, বয়স ষাট-পয়ষটির কম নয়, অন্তটি তার ছেলে, বয়স কুড়ি-বাইশ । তাদের বাড়ী বালিয়া জেলায়, আমাদের এখানে আসিয়াছে চরি-মঙ্গল ইজারা লইতে অর্থাৎ আমাদের জঙ্গলে খাজনা দিয়া তাহারা গরু-মহিষ চরাইবে । অন্য সব চরি-মহাল তখন বিলি হইয়া গিয়াছে, বোমাইবুরুর জঙ্গলট তখনও খালি পড়িয়া ছিল, সেইটাই বন্দোবস্ত করিয়া দিলাম। বৃদ্ধ ছেলেকে সঙ্গে লইয়া একদিন মহাল দেখিয়াও