পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক や> অনেক রাত্রে গ্রামের মধ্যে কান্নাকাটির রব শোনা গেল। আবার একজন মরিল। রাত্রে ঘুম হইল না । গ্রামের অনেকেই ঘুমায় নাই, ঘরের সামনে বড় বড় কাঠ জ্বালাইয়া আগুন করিয়া গন্ধক পোড়াইতেস্থে ও অfগুনের চারিধার ঘিরিয়া বসিয়া গল্প-গুজব করিতেছে । রোগের গল্প, মৃত্যুর খবর ছাড়া ইহাদের মুখে অন্ত কোন কথা নাই—সকলেরই মুখে একটা ভয়, আতঙ্কের চিহ্ন পরিস্ফুট। কাহার পালা আসে। দুপুত্ব রাত্রে সংবাদ পাইলাম, ওবেলার সেই সদ্য-বিধবা বালিকাটির কলেরা হইয়াছে। গিয়া দেখিলাম, তাহার স্বামীগৃহের পাশে এক বাড়ীর গোয়ালে সে শুইয়া আছে । ভয়ে নিজের ঘরে অসিয়া শুইতে পারে নাই, অথচ তাহাকে কেহ স্থান দেয় নাই সে কলেরার রোগী ছুইয়াছিল বলিয়া । গোয়ালের এক পাশে কয়েক অ’টি গমের বিচলির উপর পুরানো চট পাতা, তাতেই বালিকা শুইয়া ছটফট করিতেছে। আমি ও রাজু বহু চেষ্টা করিলাম হতভাগিনীকে বাচাইবার। একটি লন্ঠন, একটু জল কোথাও পাওয়া যায় না। উকি মারিয়া কেই দেখিতে পর্য্যন্ত আসিল না । আজকাল এমন আতঙ্কের স্বষ্টি হইয়াছে যে, কলেরা কাহার ও হইলে তাহার ত্রিসীমানীয় লোক ঘেষে না । রাত ফরসা হইল । রাজুব খুব নাডীজ্ঞান, হাত দেখিয়া বলিল—এ হুজুৰ মুবিধে নয় গতিক। আমি আর কি করিব, নিজে ডাক্তার নই, শু্যালাইন দিতে পারিলে হুইত, এ অঞ্চলে তেমন ডাক্তর কোথাও নাই । সকাল ন’টায় বালিকা মারা গেল । আমরা না থাকিলে তাহার মৃতদেহ কেহ বহির করিতে আসিত কি না সন্দেহ, আমাদের অনেক তদ্বির ও অনুরোধে জন দুই আহীর চাষা বাশ লইয়া আসিয়া মৃতদেহ বাশের সাহায্যে” ঠেলিতে ঠেলিতে নদীর দিকে লইয়া গেল । রাজু বলিল—বেচে গেল হুজুর। নিবা বেওয়া অবস্থায়, তাতে ছেলেমাহুষ্ট কি খেত, কে ওকে দেথত ? বলিলাম—তোমাদের দেশ বড় নিষ্ঠুর, রাজু। আমার মনে কষ্ট রহিয়া গেল যে, আমি তাহাকে তাহার মুখের অত সাধের ভাত দুটি খাইতে দিই নাই । 8 নিস্তন্ধ দুপুরে দূরে মহালিখারূপের পাহাড ও জঙ্গল অপূর্ব রহস্যময় দেখাইত । কতবার ভাবিয়াছি একবার গিয়া পাহাডটা ঘুরিয়া দেখিয়া আসিব, কিন্তু সময় হইয়া উঠে নাই। শুনিতাম মহালিথারূপের পাহাড দুর্গম বনাকীর্ণ, শঙ্খচূড় সাপের আড্ডা, বনমোরগ, দুপ্রাপ্য বস্ত চন্দ্রমল্লিক, বড় বড় ভালুকঝোড়ে ভক্তি। পাহাড়ের উপরে জল নাই বলিয়া, বিশেষত