পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জারণ্যক كوا( দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃশ্বের স্বষ্টি করে, এই যাহাকে ভাবিতেছি খাড়া উত্তরে অবস্থিত, হঠাৎ দুকদম যাইতে না যাইতে সেটা কখন দেখি পশ্চিমে ঘুরিয়া দাড়াইয়াছে। চুপ করিয়া কতক্ষণ বসিয়া রছিলাম। কাছেই বনের মধ্যে কোথায় একটা ঝরণার কলমষ্মর সেই শৈলমালবেষ্টিত বনানীর গভীর নিস্তব্ধতাকে আরও বাড়াইয়া তুলিয়াছে। আমার চারিধারেই উচু উচু শৈলচুড়া, তাদের মাথায় শরতের নীল আকাশ। কতকাল হইতে এই বন পাহাড় এই এক রকমই আছে। সুদূর অতীতের আর্ষ্যেরা খাইবার গিরিবত্ম পার হইয়া প্রথম যেদিন পঞ্চনদে প্রবেশ করিয়াছিলেন, এই বন তখনও এই রকমই ছিল ; বুদ্ধদেব নববিবাহিতা তরুণী পত্নীকে ছাড়ির যে-রাত্রে গোপনে গৃহত্যাগ করেন, সেই অতীত রাত্রিতে এই গিরিচূড়া গভীর রাত্রির চন্দ্রালোকে আজকালের মতই হাসিত ; তমসাতীরের পর্ণকুটীরে কবি বাল্মীকি একমনে রামায়ণ লিথিতে লিখিতে কবে চমকিয়া উঠিয়া দেখিয়াছিলেন সূৰ্য্য অস্তাচলচুডাবলম্বী, তমসার কালো জলে রক্তমেঘন্তুপের ছায়া পড়িয়া আসিয়াছে, আশ্ৰমমুগ আশ্রমে ফিরিয়াছে, সেদিনটিতেও পশ্চিম দিগন্তের শেষ রাঙা আলোয় মহালিখারূপের শৈলচুড়া ঠিক এমনি অনুরঞ্জিত হইয়াছিল, আজ আমার চোখের সামনে ধীরে ধীরে যেমন হইয়া আসিতেছে। সেই কতকাল আগে যেদিন চন্দ্রগুপ্ত প্রথম সিংহাসনে আরোহণ করেন ; গ্রীকরাজ হেলিওডোরা গরুড়ধ্বজ-স্তম্ভ নিৰ্ম্মাণ করেন ; রাজকন্ত সংযুক্ত যেদিন স্বয়ংবর-সভায় পৃথ্বীরাজের মুক্তির গলায় মাল্যদান করেন ; সামুগড়ের যুদ্ধে হারিয়া হতভাগ্য দারা যে রাত্রে আগ্রা হইতে গোপনে দিল্লী পলাইলেন ; চৈতন্যদেব যেদিন শ্ৰীবাসের ঘরে সংকীৰ্ত্তন করেন ; যেদিনটিতে পলাশীর যুদ্ধ হইল—মহলিখারূপে ঐ শৈলচুড়া, এই বনানী ঠিক এমনি ছিল । তখন কাহারা বাস করিত এই সব জঙ্গলে ? জঙ্গলের অনতিদূরে একটা গ্রামে দেবিয়া আসিয়াছিলাম কয়েকখানি মান খড়ের ঘর আছে, মহুয়াবীজ ভাঙিয়া তৈল বাহির করিবার জন্য দু-খণ্ড কাঠের তৈরি একটা টেকির মত কি আছে, আর এক বুড়িকে দেখিয়াছিলাম তাহার বয়স আন-নব্বই হইবে, শণের চুল, গায়ে খড়ি উড়িতেছে, রৌদ্রে বসিয়া বোধ করি মাথার উকুন বাছিতেছিল—ভারতচক্সের জরতীবেশধারিণী অন্নপূর্ণার মত। এখানে বসিয়া সেই বুড়িটার কথা মনে পড়িল—এ অঞ্চলের বন্ত সভ্যতার প্রতীক ওই প্রাচীন বুজা— পূৰ্ব্ব-পুরুষেরা এই বন-জঙ্গলে বহুসহস্ৰ বছর ধরিয়া বাস করিয়া আসিতেছে। যীশুখ্ৰীঃ যেদিন ক্ৰশে বিদ্ধ হইয়াছিলেন সেদিনও উহারা মহুয়াবীজ ভাঙিয়া যেরূপ তৈল বাহির করিত, আজি সকালেও সেইরূপ করিয়াছে। হাজার হাজার বছর নিশ্চিহ্ন হইয়া গিয়াছে অতীতের বন কুঙ্কটিকায়, উহারা আজও সাতনলি ও আঠাকাঠি দিয়া সেইরূপই পাখী শিকার করিতেছে— ঈশ্বর সম্বন্ধে, জগৎ সম্বন্ধে উহাদের চিন্তাধারা বিন্দুমাত্র অগ্রসর হয় নাই। ঐ বুড়ির দৈনন্দিন চিন্তাধারা কি, জানিবার জন্য আমি আমার এক বছরের উপাজ্জন দিতে প্রস্তুত আছি। বুঝি না কেন এক-এক জাতির মধ্যে সভ্যতার কী বীজ লুকায়িত থাকে, তাহারা যত দিন যায় তত উন্নতি করে–আবার অন্য জাতি হাজার বছর ধরিয়াও সেই একস্থানে স্থাখুবৎ নিশ্চল হইয়া থাকে ? বৰ্ব্বর আর্ধ্যজাতি চার-পাচ হাজার বছরের মধ্যে বেদ,উপনিষদ, পুরাণ, কাব্য