পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8 বিভূতি-রচনাবলী জ্যোতিৰ্ব্বিদ্যা, জ্যামিতি, চরক-মুশ্রুত লিখিল, দেশ জয় করিল, সাম্রাজ্য পত্তন করিল, ভেনাস দ্য মিলোর মূৰ্ত্তি, পাৰ্থেনন, তাজমহল, কোলে ক্যাথিড্রাল গড়িল, দরবার কানাড়া ও ফিফথ, সিমফোনির হুষ্টি করিল—এরোপ্লেন, জাহাজ, রেলগাড়ী, বেতার, বিদ্যুৎ আবিষ্কার করিল— অথচ পাপুয়া, নিউগিনি, অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসীরা, আমাদের দেশের ওই মুণ্ডা, কোল, নাগা, কুকিগণ যেখানে সেখানেই কেন রহিয়াছে এই পাচ হাজার বছর ? অতীত কোন দিনে, এই যেখানে বসিয়া আছি, এখানে ছিল মহাসমুদ্র-প্রাচীন সেই মহাসমুদ্রের ঢেউ আসিয়া আছাড় খাইয়া পড়িত ক্যাম্বিয়ান যুগের এই বালুময় তীরে—এখন যাহা বিরাট পৰ্ব্বতে পরিণত হইয়াছে। এই ঘন অরণ্যানীর মধ্যে বসিয়া অতীত যুগের সেই নীল সমুদ্রের স্বপ্ন দেখিলাম। পুরা যত স্রোত; পুলিনমধুনা তত্র সরিতাম্। এই বালুপ্রস্তরের শৈলচুডায় সেই বিশ্বত অতীতের মহাসমুদ্র বিক্ষুব্ধ উক্ষিমালার চিহ্ন রাখিয়া গিয়াছে—অতি স্পষ্ট সে চিহ্ন—ভূতত্ত্ববিদের চোখে ধরা পড়ে । মানুষ তখন ছিল না, এ ধরণের গাছপালীও ছিল না, যে ধরণের গাছপালা জীবজন্তু ছিল, পাথরের বুকে তার তাদের ছাচ রাখিয়া গিয়াছে, যে কোনো মিউজিয়মে গেলে দেখা যায় । বৈকালের রোদ রঙ হইয়া আসিয়াছে মহলিখfরূপ পাহাড়ের মাথায় । শেফালিবনের গন্ধভরা বাতাসে হেমন্তের হিমের ঈষৎ অামেজ, আর এখানে বিলম্ব করা উচিত হইবে না, সম্মুখে কৃষ্ণ একাদশীর অন্ধকার রাত্রি, বনমধ্যে কোথায় একদল শেয়াল ডাকিয়া উঠিল। ভালুক বা বাঘ পথ না আটকায় । ফিরিবার পথে এইদিন প্রথম বক্স ময়ূর দেখিলাম বনান্তস্থলীতে শিলাখণ্ডের উপর। একজোড়া ছিল, আমার ঘোড় দেখিয়া ভয় পাইয়া ময়ূরটা উড়িয়া গেল, তাহার সঙ্গিনী কিন্তু নড়িল না। বাঘের ভয়ে আমার তথন দেখিবার অবকাশ ছিল না, তবু একবার সেটার সামনে থমকিয় দাড়াইলাম। বন্য ময়ূর কখনও দেখি নাই, লোকে বলিত এ অঞ্চলে ময়ুর আছে, আমি বিশ্বাস করিতাম না । কিন্তু বেশীক্ষণ বিলম্ব করিতে ভরসা হইল না, কি জানি মহালিখারূপের বাঘের গুজবটাও যদি এ রকম সত্য হইয়া যায় ! সপ্তম পরিচ্ছেদ X দেশের জন্ত মন কেমন করা একটি অতি চমৎকার অনুভূতি। যারা চিরকাল এক জায়গায় কাটায়,স্বগ্রাম বা তাহার নিকটবৰ্ত্তী স্থান ছাড়িয়া নড়ে না—তাহারা জানে না ইহার বৈচিত্র্য। দূরপ্রবাসে আত্মীয়-স্বজনশূন্ত স্থানে দীর্ঘদিন যে বাস করিয়াছে, সে জানে বাংলা দেশের জন্য, বাঙালীর জন্ত, নিজের গ্রামের জন্ত, দেশের প্রিয় আত্মীয়স্বজনের জন্ত মন কি রকম হু-হু করে,