পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१२ বিভূতি-রচনাবলী আমার মনে হইল উহার এত কষ্ট করিয়া শেখা গ্রাম্য নাচ কলিকাতায় কে-ই বা দেখিবে আর ও বেচারী এক সেখানে কি-ই বা করিবে ? অষ্টম পরিচ্ছেদ X "প্রকৃতি তার নিজের ভক্তদের যা দেন, তা অতি অমূল্য দান। অনেক দিন ধরিয়া প্রকৃতির সেবা না করিলে কিন্তু সে দান মেলে না। আর কি ঈর্ষার স্বভাব প্রকৃতিরাণীর—প্রকৃতিকে যখন চাহিব, তখন প্রকৃতিকে লইয়াই থাকিতে হইবে, অন্ত কোন দিকে মন দিয়াছি যদি, অভিমানিনী কিছুতেই তার অবগুণ্ঠন খুলিবেন না। কিন্তু অনন্তমনা হইয়। প্রকৃতিকে লইয়া ডুবিয়া থাকে, তার সৰ্ব্ববিধ আনন্দের বর, সৌন্দর্ঘ্যের বর, অপূৰ্ব্ব শাস্তির বর তোমার উপর অজস্রধারে এত বৰ্ষিত হইবে, তুমি দেখিয়া পাগল হইয়া উঠিবে, দিনরাত মোহিনী প্রকৃতিরাণী তোমাকে শতরূপে মুগ্ধ করিবেন, নূতন দৃষ্টি জাগ্রত করিয়া তুলিবেন, মনের আয়ু বাড়াইয়া দিবেন, অমরলোকের আভাসে অমরত্বের প্রান্তে উপনীত করাইবেন । ” কয়েক বারের কথা বলি। সে অমূল্য অনুভূতিরাজির কথা বলিতে গেলে লিথিয়া পাতার পর পাতা ফুরাইয়া যায়, কিন্তু তবু বলা শেষ হয় না, যা বলিতে চাহিতেছি তাহার অনেকখানিই বাকি থাকিয়া যায়। এসব শুনিবার লোকও সংখ্যায় অত্যন্ত কম, ক’জন মনে-প্রাণে প্রকৃতিকে ভালবাসে ? অরণ্য-প্রাস্তরে লবটুলিয়ার মাঠে মাঠে দুধলি ঘাসের ফুল ফুটাইয়া জানাইয়া দেয় যে বসন্ত পড়িয়াছে। সে ফুলও বড় মুন্দর, দেখিতে নক্ষত্রের মত আকৃতি, রং হলদে, লম্বা লম্ব। সরু লতার মত ঘাসের ডাটাটা অনেকখানি জমি জুড়িয়া মাটি আঁকড়াইয়া থাকে, নক্ষত্রাকৃতি হলদে ফুল ধরে তার গাটে গাটে। ভোরে মাঠ, পথের ধার সর্বত্র আলো করিয়া ফুটিয়া থাকিত—কিন্তু স্বর্ষ্যের তেজ বাড়িবার সঙ্গে সঙ্গে সব ফুল কুক্‌ড়াইয়া পুনরায় কুঁড়ির আকার ধারণ করিত—পরদিন সকালে আবার সেই কুড়িগুলিই দেখিতাম ফুটিয়া আছে। রক্তপলাশের বাহার আছে মোহনপুর রিজার্ভ ফরেস্ট ও আমাদের সীমানার বাহিরের জঙ্গলে কিংবা মহালিথীরূপের শৈলসমুপ্ৰদেশে। আমাদের মহাল হইতে সে-সব স্থান অনেক দূরে, ঘোড়ায় তিন-চার ঘণ্টা লাগে । সে-সব জায়গায় চৈত্রে শালমঞ্জরীর মুবাসে বাতাস মাতাইয়া রাখে, শিমুল বনে দিগন্তরেখা রাঙাইয়া দেয়, কিন্তু কোকিল, দোয়েল, বেী-কথাকও প্রভৃতি গায়কপার্থীরা ডাকে না, এসব জনহীন অরণ্য-প্রান্তরের যে ছন্নছাড়া রূপ, বোধ হয় তাহারা তাহা পছন্দ করে না । এক-এক দিন বাংলা দেশে ফিরিবার জন্য মন হাপাইয়া উঠিত, বাংলা দেশের পল্লীর সে