পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ꬃዓ নাই। বাঙালীর বাড়ী বলিয়া চিনিবার কোনও উপায় নাই, বসিবার ঘরে দড়ির চারপাই হইতে উঠানের হনুমানধ্বজাটি পর্য্যন্ত সব এদেশী । আমণব ডাকে একটি বার-তের বছরের ছেলে বাহির হইয়া আসিল ; আমায় দেখিয়া ঠেট, হিন্দীতে জিজ্ঞাসা করিল-কাকে খুঁজছেন ? তাহার চেহারা দেথিয়া মনে হয় না যে, সে বাঙালীর ছেলে। মাথায় লম্বা টিকি, গলায় অবস্ত বৰ্ত্তমানে কাচা—সবই বুঝিলাম, কিন্তু মুখের ভাব পৰ্য্যন্ত হিন্দুস্থানী বালকের মত কি করিয়া হয় ? আমার পরিচয় দিয়া বলিলাম—তোমাদের বাড়ীতে এখন বড় লোক কে আছেন তাকে ডাক । o ছেলেটি বলিল, সে-ই বড় ছেলে। তার আর দুটি ছোট ছোট ভাই আছে। বাড়ীতে আর কোন অভিভাবক নাই । বলিলাম—তোমার মায়ের সঙ্গে আমি একবার কথা কইতে চাই। জিজ্ঞেস করে এস । খানিকট পরে ছেলেটি আসিয়া আমায় বাড়ীর মধ্যে লইয়া গেল। রাখালবাবুর স্ত্রীকে দেখিয়া মনে হইল বয়স অল্প, ত্ৰিশের মধ্যে, সন্ত-বিধবার বেশ, কাদিয়া কাদিয়া চক্ষু ফুলিয়াছে। ঘরের আসবাবপত্র নিতান্ত দরিদ্রের গৃহস্থালির মত। এক দিকে একটা ছোট গোলা, ঘরে দাওয়ায় থান-দুই চারপাই, ছেড লেপ কথা, এদেশী পিতলের ঘয়লা, একটা গুডগুড়ি, পুরনো টিনের তোরঙ্গ। বলিলাম—আমি বাঙালী, আপনার প্রতিবেশী। আমার কানে গেল বাখালবাবুর কথা, তাই এলাম। আমার এখানে একটা কৰ্ত্তব্য আছ বলে মনে করি । আমার কোন সাহায্য যদি দরকার হয়, নিঃসঙ্কোচে বলুন । রাখালবাবুর স্ত্রী কপাটের আড়ালে দাডাইয়া নিঃশবে কাদিতে লাগিলেন। আমি বুঝাইয়া শাস্ত করিয়া পুনরায় আমার আসিবার উদেশ্ব ব্যক্ত করিলাম। রাখালবাবুর স্ত্রী এবার আমার সামনে বাহির হইলেন। কাদিতে কাদিতে বলিলেন—আপনি আমার দাদার মত, আমাদের এই ঘোর বিপদের সময় ভগবান আপনাকে পাঠিয়েছেন। ক্রমে কথায় কথায় জানা গেল, এই বাঙালী পরিবার সম্পূর্ণ নিঃস্ব ও অসহায় এই ঘোর বিদেশে। রাখালবাবুর গত এক বৎসরের উপর শয্যাগত ছিলেন। তার চিকিৎসা ও সংসার-খরচে সঞ্চিত অর্থ সব নিঃশেষ গিয়াছে—এখন এমন উপায় নাই যে র্তার শ্রীদ্ধের যোগাড় হয়। জিজ্ঞাসা করিলাম—আচ্ছা রাখালবাবু তো অনেকদিন ধরে এ অঞ্চলে আছেন, কিছু করতে পারেন নি ? 点 রাখালবাবুর স্ত্রীর সঙ্কোচ ও লজ্জা অনেকটা দূর হইয়াছিল। তিনি যেন এই প্রবাসে, এই দুদিনে একজন বাঙালীর মুখ দেখিয়া অকুলে কুল পাইয়াছেন, মুখের ভাবে মনে হইল। বলিলেন—আগে কি রোজগার করতেন জানি নে। আমার বিয়ে হয়েছে এই পনের বছর—আমার সতীন মারা যেতে আমার বিয়ে করেন। আমি এসে পৰ্য্যস্ত দেখছি কোন