পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԵ, বিভূতি-রচনাবলী রকমে সংসার চলে। এখানে ভিজিটের টাকা বড় একটা কেউ দেয় না, গম দেয়, মকাই দেয়। গত বছর মাঘ মাসে উনি অমুখে পড়লেন, সেই থেকে আর একটি পয়সা ছিল না। তবে এদেশের লোক খারাপ নয়, যার কাছে যা পাওনা ছিল, বাড়ী বয়ে সে-সব গম মকাই কলাই দিয়ে গিয়েছে। তাই চলেছে, নয়ত না থেয়ে মরত সবাই । —আপনার বাপের বাড়ী কোথায় ? সেখানে খবর দেওয়া হয়েছে ? রাখালবাবুর স্ত্রী কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিরা বলিলেন—খবর দেবার কিছু নেই। আমার বাপের বাড়ী কখনও দেখি নি। শুনেছিলুম, ছিল মুর্শিদাবাদ জেলায় । ছেলেবেল থেকে আমি সাহেবগঞ্জে ভগ্নীপতির বাড়ীতে মাতুষ । মা-বাবা কেউ ছিলেন না। আমার সে-দিদি আমার বিয়ের পর মারা যায় । ভগ্নীপতি আবার বিয়ে করেছেন । তার সঙ্গে আর আমার সম্পর্ক কি ? —রাখালবাবুর কোন আত্মীয়স্বজন কোথাও নেই ? —দেশে জ্ঞাতি ভাইয়েরা আছে শুনতাম বটে, কিন্তু তারা কখনও সংবাদ নেয় নি, উনিও দেশে যাতায়াত করতেন না। তাদের সঙ্গে সদ্ভাবও নেই, তাদের খবর দেওয়া-না-দেওয়া সমান। এক মামাশ্বশুর আছেন আমার শুনতাম, কাশীতে। তা-ও তার ঠিকানা জানি নে । ভয়ানক অসহায় অবস্থা। আপনার জন কেহ নাই, এই বন্ধুহীন বিদেশে দুই তিনটি নাবালক ছেলে লীয়া সহায়সম্পদশূন্ত বিধবা মহিলাটির দশ ভাবিয়া মন রীতিমত দমিরা গেল। তখনকার মত যাহা করা উচিত করিয়া আমি কাছারিতে ফিরিয়া আসিলাম, সদরে লিথিয়া স্টেট হইতে আপাতত এক শত টাকা সাহায্যের ব্যবস্থা করিয়া রাখালবাবুর শ্রাদ্ধও কোন রকমে শেষ করিয়া দিলাম । ইহার পর আরও বারকয়েক রাখালবাবুর বাড়ী গিয়াছি। স্টেট হইতে মাসে দশটি টাকা সাহায্য মঞ্জুর করাইয়া লইয়া প্রথম বারের টাকাটা নিজেই দিতে গিয়ছিলাম। দিদি খুব যত্ন করিতেন, অনেক স্নেহ-আত্মীয়তার কথা বলিতেন। সেই বিদেশে তার স্নেহ-যত্ব আমার বড় ভাল লাগিত। তারই লোভে অবসর পাইলেই সেখানে যাইতাম । Nව লবটুলিয়ার উত্তর প্রান্ত খুব বড় একটা হ্রদের মত। এ রকম জলাশয়কে এদেশে বলে কুণ্ডী । এই হ্রদটার নাম সরস্বতী কুণ্ডী। সরস্বতী কুণ্ডীর পাড়ের তিনদিকে নিবিড় বন । এ ধরণের বন আমাদের মহালে বা লবটুলিয়াতে নাই। এ বনে বড় বড় বনস্পতিদের নিবিড় সমাবেশ–জলের সান্নিধ্য-বশতই হোক বা যে-জন্তই হোক, বনের তলদেশে নানা বিচিত্র লতাপাত, বন্তপুষ্পের ভিড় । এই