পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e বিভূতি-রচনাবলী فيb সরস্বতী কুণ্ডী সেখানে ঠুংরী, সুমিষ্ট স্বরের মধুর ও কোমল বিলাসিতীয় মনকে আদ্র ও স্বপ্নময় করিয়া তোলে। স্তন্ধ দুপুরে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে এখানে তীর-তরুর ছায়ায় বসিয়া পাখীর কুজন শুনিতে শুনিতে মন কত দূরে কোথায় চলিয়া যাইত, বন্ত নিমগাছের সুগন্ধি নিমফুলের সুবাস ছড়াইত বাতাসে, জলে জলজ লিলির দল ফুটিত । কতক্ষণ বসিয়া থাকিয়া সন্ধ্যার পর সেখান হইতে উঠিয়া আসিতাম। নাঢ় বইহার জরীপ হইতেছে প্রজাদের মধ্যে বিলির জন্ত, আমীনদের কাজ দেখাইবার জন্ত প্রায়ই সেখানে যাইতে হয়। ফিরিবার পথে মাইল দুই পূৰ্ব্ব-দক্ষিণ দিকে একটু ঘুরিয়৷ যাই, শুধু সরস্বতী কুণ্ডীর এই বনভূমিতে ঢুকিয়া বনের ছায়ায় খানিকটা বেড়াইবার লোভে। সেদিন ফিরিতেছিলাম বেলা তিনটার সময় । খর রৌদ্রে বিস্তীর্ণ রৌদ্রদগ্ধ প্রাস্তর পার হইয়া ঘৰ্ম্মাক্ত কলেবরে বনের মধ্যে ঢুকিয়া ঘন ছায়ায় ছায়ায় জলের ধার পর্য্যন্ত গেলাম— প্রান্তরসীমা হইতে জলের কিনার প্রায় দেড় মাইলের কম নয়, কোন কোন স্থানে আরও বেশী । একটা গাছের ডালে ঘোড়া বাধিয়া নিবিড় ঝোপের তলায় একখানা অয়েলক্লথ পাতিয়া একেবারে শুইয়া পড়িলাম। ঘন ঝোপের ডালপালা চারিধার হইতে এমন ভাবে আমায় ঢাকিয়াছে যে, বাহির হইতে আমায় কেউ দেখিতে পাইবে না । হাত-দুই উপরে গাছপালা, মোটা মোট কাঠের মত শক্ত গুড়িওয়াল কি একপ্রকার বন্তলতা জড়াজড়ি করিয়া ছাদ রচনা করিয়াছে—একটা কি গাছ হইতে হাতখানেক লম্বা বড় বনসিমের মত সবুজ সবুজ ফল আমার প্রায় বুকের উপর দুলিতেছে। আর একটা কি গাছ, তার ডালপালা প্রায় অৰ্দ্ধেক ঝোপট জুড়িয়া, তাহাতে কুচে কুচে ফুল ধরিয়াছে, ফুলগুলি এত ছোট যে কাছে না গেলে চোখে পড়ে না—কিন্তু কি ঘন নিবিড় মুবাস সে-ফুলের ! ঝোপের নিভৃত তল ভারাক্রান্ত সেই অজানা বনপুষ্পের সুবাসে । পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি সরস্বতী কুণ্ডীর বন পার্থীর আড্ডা। এত পার্থীও আছে এখানকার বনে ! কত ধরণের, কত রং-বেরঙের পার্থী—তামা, শালিক, হরট্রিট, বনটিয়া, ফেজান্টক্রো, চড়াই, ছাতারে, ঘুঘু, হরিয়াল। উচু গাছের মাথায় বাজবেরী, চির, কুল্লেী-সরস্বতীর নীল জলে বক, সিল্পী, রাঙা হাস, মাণিকপার্থী, কঁকি প্রভৃতি জলচর পার্থী—পার্থীর কাকলীতে মুখর হইয়া উঠিয়াছে ঝোপের উপরটা, কি বিরক্তই করে তারা, তাদের উল্লাস-ভর অবাক কুজনে কান পাতা দায়। অনেক সময় মানুষকে গ্রহই করে না, আমি শুইয়৷ আছি দেখিতেছে, আমার চারি পাশে হাত-দেড়-দুই দূরে তারা ঝুলন্ত ডালপালায় লতায় বসিয়া কিচ কিচ, করিতেছে—আমার প্রতি ভ্ৰক্ষেপ ও নাই । পাখীদের এই অসঙ্কোচ সঞ্চরণ আমার বড় ভাল লাগিত। উঠিয়া বসিয়াও দেখিয়াছি তাহারা ভয় পায় না, একটু হয়ত উড়িয়া গেল, কিন্তু একেবারে দেশছাড়া হইয়া পালায় না। খানিক পরে নাচিতে নাচিতে বকিতে বকিতে আবার অত্যন্ত কাছে আসিয়া পড়ে। এখানেই এদিন প্রথম বন্ত হরিণ দেখিলাম। জানিতাম বন্ত হরিণ আমাদের মহালের জঙ্গলে আছে, কিন্তু এর আগে কখনও চোখে পড়ে নাই। শুইয়া আছি—হঠাৎ কিসের