পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক boy পায়ের শব্দে উঠিয়া বসিয়া মাথার শিয়রের দিকে চাহিয়া দেখি ঝোপের নিভূতত্তর দুর্গমতর অঞ্চলে নিবিড় লতাপাতার জড়াজড়ির মধ্যে আসিয়া দাড়াইয়াছে একটা হরিণ । ভাল করিয়া চাহিয়া দেখি, বড় হরিণ নয়, হরিণশাবক। সে আমার দেখিতে পাইরা অবোধবিস্ময়ে বড় বড় চোখে আমার দিকে চাহিয়া আছে—ভাবিতেছে, এ আবার কোন অদ্ভুত জীব ! খানিকক্ষণ কাটিয়া গেল, দুজনেই নিৰ্ব্বাক, নিম্পন্দ । আধ মিনিট পরে হরিণ-শিশুটা যেন ভাল করিয়া দেখিবার জন্য আবার একটু আগাইয়া আসিল। তার চোখে ঠিক যেন মন্ত্যশিশুর মত সাগ্রহ কৌতুহলের দৃষ্টি। আরও কাছে আসিত কি না জানি না, আমার ঘোড়াটা সে সময় হঠাৎ প। নাড়িয়া গা ঝাড়া দিয়া ওঠাতে হরিণশিশু চকিত ও সন্ত্রস্ত ভাবে ঝোপের মধ্য দিয়া দৌড়াইয়া তাহার মায়ের কাছে সংবাদটা দিতে গেল । তার পর কতক্ষণ ঝোপের তলায় বসিয়া রহিলাম। গাছপালার ফঁাকে ফঁাকে চোখে পড়ে সরস্বতী কুণ্ডীর নীল জল অৰ্দ্ধচন্দ্রাকারে দূর শৈলমালার পাদদেশ পর্যন্ত প্রসারিত, আকাশ নীল, মেঘের লেশ নাই কোন দিকে—কুণ্ডীর জলচর পাখীর দল ঝগড়া, কলরব, তুমুল দাঙ্গ শুরু করিয়াছে—একটা গভীর ও প্রবীণ মানিক-পার্থী তীরবর্তী এক উচ্চ বনস্পতির শীর্ষে বসিয়া থাকিয়া থাকিয় তাহার বিরক্তি জ্ঞাপন করিতেছে । জলের ধারে ধীরে বড় বড় গাছের মাথায় বকের দল এমন বৰ্ণক বাধিয়া আছে দূর হইতে মনে হয় যেন সাদা সাদা থোকা থোকা ফুল ফুটিয়াছে। রোদ ক্রমশঃ রাঙা হইয়া আসিল । ওপারে শৈলচূড়ায় যেন তামার রং ধরিয়াছে। বকের দল ডান মেলিয়া উড়িতে আরম্ভ করিল। গাছপালার মগডালে রোদ উঠিয়া গেল। পাখীর কুজন বাড়িল, আর বাড়িল মজান বনকুসুমের সেই মুম্ৰাণটা । অপরাহ্লের ছায়ার গন্ধটা যেন আরও ঘন, আরও স্বমিষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। একটা বেজি খানিকদূর হইতে মাথা উচু করিয়া আমার দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া দেখিতেছে। কি নিভৃত শাস্তি! কি অদ্ভুত নির্জনতা ! এতক্ষণ তো এখানে আছি, সাড়ে তিন ঘন্টার কম নয়-বস্ত পার্থীর কাকলী ছাড়া অন্ত কোন শব্দ শুনি নাই, আর পার্থীদের পারে পারে ডালপাতার মচ মচানি, শুষ্কপত্র বা লতার টুকুর পতনের শব্দ। মানুষের চিহ্ন নাই কোন দিকে । w নানা বিচিত্র ও বিভিন্ন গড়ন বনস্পতিদের শীর্ষদেশের । এই সন্ধ্যার সময় রাঙা রোদ পড়িয়া তাদের শোভা হইয়াছে অদ্ভূত। তাদের কতগাছের মগডাল জড়াইয়া লতা উঠিয়াছে ; এক ধরণের লতাকে এদেশে বলে ভিয়োর লতা—আমি তাহার নাম দিয়াছি ভোমরা লতা —সে লতা যে গাছের মাথায় উঠিবে, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়াইয়া ধরিয়া থাকে। এই সময় ভোমরা লতায় ফুল ফোটে—ছোট ছোট বনজুইয়ের মত সাদা সাদা ফুলে কত বড় গাছের عدسه ،ة مfa