পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

5 ఫీ দেবতা, এক সময়ে কি বিষয়ে সফলমনস্কাম হইয়া তাহারা দেবীর মন্দিরে নরবলি দেন, তাহাতে রুষ্ট হইয়া দেবী স্বপ্নে জানাইয়া যান যে তিনি মন্দির পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলেন, আয় কৰে । ফিরিবেন না। অনেক কালের কথা, বিশালাক্ষীর পূজা হইতে দেখিয়াছে এরূপ কোনো কি আর জীবিত নাই, মন্দির ভাঙিয়া চুরিয়া গিয়াছে, মন্দিরের সম্মুখের পুকুর মজিয়া ড়ে, .ায় পরিণত হইয়াছে, চান্বিধার বনে ছাইয়া ফেলিয়াছে, মজুমদার বংশেও বাতি দিতে আবু কেহ নাই কেবল-সেও অনেকদিন আগে--গ্ৰামের স্বরূপ চক্ৰবন্ত্রী ভিন-গী হইতে নিমন্ত্রণ খাইয়া ফিরিতেছিলেন—সন্ধ্যার সময় নদীর ঘাটে নামিয়া আসিতে পথের ধাৱে দেখিলেন একটি সুন্দরী ষোড়শী মেয়ে দাড়াইয়া । স্থানটি লোকালয় হইতে দূরে, সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছিল, পথে কেহ কোথাও নাই, এ সময় নিৱালা বনের ধারে একটি অল্পবয়সী সুন্দরী মেয়েকে দেখিয়া স্বৰূপ চক্ৰবৰ্ত্তী দস্তুরমত বিস্মিত হইলেন। কিন্তু তিনি কোনো কথা কহিবার পূর্বেই মেয়েটি ঈষৎ গৰ্ব্বমিশ্রিত অথচ মিষ্টসুরে বলিল-আমি এ গ্রামের বিশালাক্ষী দেবী । গ্রামে অল্পদিনে ওলাওঠার মড়ক আরম্ভ হবে-ব’লে দিও চতুৰ্দশীর রাত্রে পঞ্চানন্দতলায় একশ আটটা কুমড়ে বলি দিয়ে যেন কালীপূজা ফর্শে ; কথা শেষ হইবার সঙ্গে সঙ্গেই স্তম্ভিত স্বরূপ চক্ৰবৰ্ত্তীর চোখের সামনে মেয়েটি চারিধারের শীত-সন্ধ্যার কুয়াসায় ধীরে ধীরে যেন মিলাইয়া গেল। এই ঘটনার দিন কয়েক পরে সত্যই সেবার গ্রামে ভয়ানক মড়ক দেখা দিয়াছিল। এ সব গল্প কতবার শুনিয়াছে। জানালার ধারে দাড়াইলেই বিশালাক্ষী ঠাকুরের কথা তাহার মনে ওঠে। দেবী বিশালাক্ষাকে একটিবার দেখিতে পাওয়া যায় না ? হঠাৎ সে বনের পথে হয়ত গুলঞ্চের লতা পড়িতেছে—সেই সময়--- খুব সুন্দর দেখিতে, রাঙা পাড় শাড়ী পরলে, হাতে গলায় মা-দুর্গার মত হার বালা । --তুমি কে ? --আমি অপু। —তুমি বড় ভাল ছেলে, কি বর চাও? সে বিছানায় গিয়া শোয় । এক একবার ঝিরঝিরে হাওয়ায় কত কি লতাপাতার তিক্তমধুর গন্ধ ভাসিয়া আসে, ঠিক দুপুরবেলা, অনেক দূরের কোনো বড় গাছের মাথার উপর হইতে গাঙচিল টানিয়া টানিয়া ডাকে, যেন এই ছোট্ট গ্রামখানির অতীত ও বর্তমান সমস্ত ছোট-খাটো দুঃখ শান্তি দ্বন্ধের উদ্ধে, শরৎ-মধ্যাহ্নের রৌদ্রভরা, নীল নিৰ্জন আকাশপথে, এক উদাস, গৃহ-বিবাণী পথিক-দেবতার স্বকণ্ঠের অবদান দূর হইতে দূরে মিলাইয়া চলিয়াছে। কখন সে ঘুমাইয়া পড়ে বুঝিতে পারে না, ঘুমাইয়া উঠিয়া দেখে বেলা একেবারে নাই। জানালার বাহিরে সারা বনটায় ছায়া পড়িয়া আসিয়াছে, পাশকাডের আগায় রাঙা রোদ । প্রতিদিন এই সময়-ঠিক এই ছায়া-ভরা বৈকালটিতে, নির্জন বনের দিকে চাহিয়া তাহার অতি অদ্ভুত কথা লব মনে হয়। অপুর্ব খুশিতে মন ভরিয়া ওঠে, মনে হয় এ রকম লতাপাতার