পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের পাঁচালী Sos কথক ঠাকুর বলিল-কমললেবুখাবে? অপু ঘাড় মাড়িয়া বলিল-আছে আপনার ? কি জানি কেন এই কথক ঠাকুরের কাছে তাহার কোনো প্রকার লজা কি সঙ্কোচ বোধ হুইতেছিল না। লেবুর খোসা ছাড়াইতে ছাড়াইতে জিজ্ঞাসা করিল-“কালে বর্ষীতু পর্জঙ্কিং" জানেন। আপনি ? -কালে বর্ধাতু পর্জন্তুং ? খুব জানি, রোজ বলি তো, একদিন শুনো না -এখন বলুন না একটিবার ? কথক সুর করিয়া বলিল বটে। কিন্তু অপুর মনে হইল তাহার বাবার মুখে শুনিলে আরও ভাল লাগে, কখকের গলা বড় মোট । দেশে লইয়া যাইবার জন্য কথকঠাকুর নানা খুচরা মাটির ও পাথরের জিনিস-পুতুল, খেলনা, শিবলিঙ্গ, মালা, কাঠের কঁকাই সংগ্ৰহ করিয়া রাখিয়াছে। অপুকে দেখাইয়া বলিল-কাশীর জিনিস, সবাই বলবে কি এনেচ দেখি! তাই নিসে যাবে নানা সরু গলি পার হইয়া একটা অন্ধকার বাড়ীর দরজার সামনে আসিয়া কথক ঠাকুর দাড়াইল। নীচু দরজা দিয়া অতি কষ্টে কখকের সঙ্গে ঢুকিয়া অপুর মনে হইল বাড়ীটায় কেহ কোথাও নাই, সব নিঝুম। কথক ঠাকুর দু’একবার গলায় কাশিৱ শব্দ করিতে কে একজন দালানের চারপাই হইতে ঘুম ভাঙিয়া উঠিয়া মোটা গলায় হিন্দীতে কি জিজ্ঞাসা করিল, অপু তাহা বুঝিতে পারিল না। কথক ঠাকুর পরিচয় দিবার পরেও মনে হইল লোকটা তাঁহাকে চিনেও না বা তাহদের আগমন প্ৰত্যাশাও করে নাই। পরে লোকটা যেন একটু বিরক্রির সহিত কাহাকে কি জিজ্ঞাসা করিতে গেল। কিন্তু ফিরিতে এত দেৱী করিতে লাগিল যে, অপুর মনে হইল হয়তো ইহারা বলিবে তোমাদের তো নিমন্ত্রণ হয় নাই, যাও তোমরা । যাহাঁই হউক, অন্ধকারে ঠায় পনেরো মিনিট দাড়াইবার পরে লোকটা ফিরিয়া আসিয়া দালানের একস্থানে আধা-অন্ধকারে খানকতক শালপাতা পাতিয়া ইহাদের বসাইয়া দিল , একটা মোটা পিতলের লোটায় জল দিয়া গিয়াছে। কথক ঠাকুর যেন ভয়ে ভয়ে গিয়া আসনের উপর বসিল। য়াজার বাষ্ঠী কি না জানি খাওয়ায্য ? অধীর আগ্রহে অপু প্ৰায় আরও বিশ মিনিট পাতা পাতিয়া বসিয়া রহিল-কাহারও দেখা নাই । নিমন্ত্রণ খাইতে পাইবার নিশ্চয়তায় সম্বন্ধে যখন পুনরায় অপুৱা মনে সন্দেহ দেখা দিতেছে ঠিক সেই সময় পরিবেষ্টর আবির্ভাবরূপ অঘটন ঘটিল। মোটা মোটা আটার পুরী ও স্বাদ-গন্ধহীন বেগুনের ঘণ্ট-শেষে খুব বড় বড় লাড়ন্দু। অপু কামড়াইতে গিয়া লাড়ুতে দাঁত বসাইতে পারিল না, এত কঠিন। কথক ঠাকুর চাহিয়া চাহিয়া সেই মোটা পুৰী খান দশ-বারো আগ্রহের সচিন্ত খাইল। মাঝে মাকে অপুর দিকে চাহিয়া বলিতেছিল-“পেট ভরে থাও, লজ্জা কোৱো না, বেশ খাওয়ায়।--বেশ লাউড়, না ? XV এখনও খুব জোর আছে, বেশ চিকুতে পারি। একশত বৎসর একসঙ্গে থাকিলেও কেহ হয়তো আমার হৃদয়ের বাহিয়ে থাকিয়া যায় যদি না কোনো বিশেষ ঘটনায় সে আমার হৃদয়ের কবাট খুলিতে পারে। আজকার এই নিমন্ত্রণ