পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দু-হোটেল ৩৭ মেয়েরা খাইতে পায়। বলিয়াও স্বখ । টেপি বলিল—তুমি খাও মা । আমি খুব খেয়ে এসেচি। সেখানেও তো পরোট, মজি, মাছের ডালন, এই সব খাইয়েচে । আজ দিনটা বেশ কাটল—না মা ? ভাল খাওয়া সকাল থেকে শুরু হয়েচে আর রাত পৰ্য্যস্ত চলেচে । আহারাদি শেষ করিয়া হাজারি বাহিরে বসিয়া তামাক খাইতে লাগিল । হরিচরণবাবুর কথায় তাহার অনেকখানি উৎসাহ আজ বাড়িয়া গিয়াছে। - লুচি ! টেপি কত লুচি খাইতে পারে, সে তাহার ব্যবস্থা করিবে। তাহার এই সব লোভাতুর ছেলে-মেয়ের মুখে ভাল খাবার-দাবার সে দিতে পারে ন!—কিস্ত ধাতে পারে সে চেষ্টা করিবার জন্যই তো হযোগ খুজিয়া বেড়াইতেছে। হরিচরণবাবুর টাকা আছে বটে, কিন্তু তাহার মত লোভাতুর ছেলে-মেয়ে নাই তাহার ঘরে, কাহাদের মুখে মুখাদ্য তুলিয়া দিবার আশায় তিনি খাটিবেন ? আজ হরিচরণবাবুর নিকট হইতে সে টাকা ধার পায় নাই বটে, কিন্তু এমন একটা জিনিস পাইয়া আসিয়াছে, যাহার মূল্য টাকা-কড়ির চেয়ে বেশী। তাহার সংসারে ছেলে মেয়ে আছে, টেপি আছে, তাহাদের মুখের দিকে চাহিয়া তাহার হাতে পায়ে বল আসিবে, মনে জোর পাইবে । হরিচরণবাবুর জীবন শেষ হইয়া গিয়াছে। তাহার বয়স ছে’চল্লিশ হইলে কি হয়, টেপি যে ছেলেমানুষ । তাহার নিজের স্বথ কিসের ? টেপিকে একখানা ভাল শাড়ী কিনিয়া দিলে ওর মুখে যে হাসি ফুটিবে, সেই হাসি তাহাকে অনেক দূরে লইয়া যাইবে কৰ্ম্মের পথে । আহাঁ, যদি এমন কখনো হয় । যদি টেপিকে একটা কলের গান কিনিয়া দেওয়া যায় ? গান এত ভালবাসে যখন••• হয়তো স্বপ্ন•••কিন্তু ভাবিয়াও তো আনন্দ । দেখা ধাকু না কি হয় । বঁfশঝাড়ে শন শন শব হইতেছে। রাত অনেক হইয়াছে। গ্রাম নীরব হুইয়া গিয়াছে। এতক্ষণে হাজারি স্ত্রীকে বলিল—ওগো, আমার গামছাখন বডড ময়লা হয়েচে, একটু সোডা দিয়ে ভিজিয়ে দাও তো, কাল খুব সকালে কেচে দি ও আমি কাল সক্কালে উঠেই রাণাঘাট যাবে। 母 সকালে কেন, এখুনি কেচে দিই। ভিজে গামছা নিয়ে যাবে কি করে, এখন কেচে হাওয়ায় মেলে দিলে রাত্তিরের মধ্যে শুকিয়ে যাবে। সকালে উঠিয়া হাজারি ঠাকুর রাণাঘাট চলিয়া আদিল । হোটেলে চুঞ্চিবার আগে তাহার ভয় করিতে লাগিল। কর্তাবাবু এবং পদ্ম ঝি তাহাকে কি না জানি বলে। একদিন কামাই করিবার জন্য কৈফিয়ৎ দিতে দিতে তাহার প্রাণ যাইবে । হইলও তাই । টুকিবার পথেই বসিয়া স্বয়ং বেচু চক্ষত্তিমশায়—খোদ কর্তা। হাজারিকে দেখিয়া হাতের