পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ob” বিভূতি-রচনাবলী হক নামাইয়া কড়া স্বরে বলিলেন—কাল কোথায় ছিলে ঠাকুর ? হাজারি মিথ্যা কথা বলিল না। বাড়ীতে কাহারও অমুখ ইত্যাদি ধরনের বানানো মিথ্যা কথা সে কখনও বলে না । বলিল—আজ্ঞে, অনেক দিন পরে বাড়ী গেলাম কৰ্ত্তামশায়, ছেলে-মেয়ে রয়েছে--তাই একটা नि _ —না ব’লে-ক’য়ে এভাবে হোটেল থেকে পালিয়ে যাবার মানে কি ? কার কাছে ছুটি নিয়ে গিয়েছিলে ? এ কথার জবাব সে দিতে পারিল না। লুচি দিতে গিয়াছিল বাড়ীতে, তাহা বলিতেও বাধে। সে চুপ করিয়া রহিল। —তোমার হাড়ে হাড়ে বদমাইশি ঠাকুর—পদ্ম ঝি ঠিক কথা বলে—দেখতে ভালমানুষ হোলে কি হবে ? তুমি এত বড় একটা হোটেলের রান্নাবান্ন ফেলে রেখে একেবারে নিউদিশ হয়ে গেলে কাউকে কিছু না ব’লে ? বলি একেবারে নাকের জলে চোখের জলে সবাই মিলে —গাজাখোর, নেমকহারাম কোথাকার । চালাকির আর জায়গা পাওনি ? বেচু চকত্তির গলার জোর আওয়াজ পাইয়া পদ্ম ঝি ব্যাপার কি দেখিতে আসিল এবং দোরে উকি মারিয়া হাজারিকে দেখিয়াই বলিয়া উঠিল—এই যে ! কি মনে করে! আবার ষে উদয় হ’লে ? কাল আমি বলি আর দরকার নেই, ও আপদ বিদেয় ক’রে দেন কৰ্ত্ত, গাজা খেয়ে কোথায় নেশায় বুদ হয়ে পড়েছিল--চেহারা দেখচেন না ? হাজারি একটু শঙ্কিত হইয়া উঠিয়া দেওয়ালে টাঙানো গজাল-আঁটা ছোট আয়নাখানায় নিজের মুখখান দেখিবার চেষ্টা করিল—কি দেখিল পদ্ম ঝি তাহার চেহারাতে ! গাজা তো "রের কথা, একটা বিড়ি পর্যন্ত সকাল হইতে সে খায় নাই! —যাও, কাল একটা ঠিকে ঠাকুর আনা হয়েছিল, তার মজুরি এক টাকা, আর জলখাবারের চার অানা তোমার এ মাসের মাইনে থেকে কাটা যাবে। ফের যদি এমন হয়, সেই দিনই বিদেয় ক’রে দেবে মনে থাকে ধেন—বেচু চকত্তি রায় দিলেন । হাজারি অপ্রতিভ মুখে রান্নাঘরের মধ্যে গিয়া ঢুকিল—সেখানেও নিস্তার নাই। কর্তার হাত হইতে নিষ্কৃতি পাইলেও, পদ্ম ঝির হাতে অত সহজে পরিত্রাণ পাওয়া দুষ্কর। পদ্ম ঝি হাজারির পেছন পেছন রান্নাঘরে ঢুকিয়া বলিল-করবে না তো তোমার কাজ ওরা— কেন করবে ?--- একা হাড়ি ঠেলো আজকে—যেমন বদমাইশ তার তেমনি । এক বড় ডেকৃচি নামাও, ফেন গালে, ভাত বাড়ো খদেরদের—কাল সব কাজ মুখ বুজে ও-ঠাকুর করেছে এক —নবাবপুত্তর গাজা খেয়ে কোথায় পড়ে আছেন আর ওর জন্যে খেটে মরবে সবাই—উড়ষ্ণুড়ে মডুইপোড়া বামুন কোথাকার । পদ্ম কি রাগের মাথায় ভুলিয়া গিয়াছিল, এই মাত্র বেচু চৰুত্তি বলিয়াছেন যে, কাল হাজারির বঙ্গলে ঠিক ঠাকুর রাখা হইয়াছিল যাহার মজুরি হাজারির মাহিন হইতে কাটা বাইবে । হাজারি অবাক হইয়া বলিল, একা কি রকম ? এই তো ঠিকে ঠাকুর রাখা হয়েচে বয়েন কর্তাবাবু ?