পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল 86. নশ্বর যদি দেওয়া থাকে, আর টিকিটের নম্বরের সঙ্গে যদি তার মিল থাকে, তবে থালা এটো হইলেই ধরা পড়িবে অমুক নম্বরের থালার খঙ্গের বিনা টিকিটে খাইয়াছে—না পয়সা দিয়া থাইয়াছে । মাঝে মাঝে তদারক করিলেই জিনিসটা ধরা পড়িবে। তা ছাড়া থালা মাজিবfর সময় ঝি বা চাকরের নিকট হইতে এটে থালার নম্বরগুলি জানিয়া লইলেই হইবে । হাজারি খুব খুশী হইল। ঠিক বাহির করিয়াছে বটে—একটা ফাক অবিপ্তি আছে, সেও জানে—যদি কলাপাতায় খাইতে দেওয়া হয়। যদি বিনা নস্বরী থালা সেই লোকটা বাহির হইতে আনে—তাহাতে নিস্তার নাই, কারণ ঝি-চাকরের চোখে তখনই ধরা পড়িবে। এ টে। থালা সেই লোকটা কিছু মাজিতে বসিতে পারে না হোটেলের মধ্যেই । কলার পাতায় কেহ খাইতেছে, ইহা চোখে পড়িলে তখনি বি-চাকরে সন্দেহ করিবে বলিয়। হঠাৎ কেহ সাহস করিবে না কাহাকেও পাতায় ভাত দিতে । দুশো-আড়াইশো টাকা যদি যোগাড় করা যায়, তবে এই রেলবাজারেই আপাতত: হোটেল খুলিয়া দেওয়া যায়। টাকা দেয় কে ? যতীশ ভট্চাজের কথা তাহার মনে পড়িল । বেচারী বড় কষ্টে পড়িয়াছে ! শেষে কিনা ভায়রাভাইয়ের বাড়ী চলিয়াছে আশ্রয় প্রার্থনা করিতে ! লোকে কি সোজা কষ্ট পাইলে তবে কুটুম্বস্থানে যায় চাকুরির উমেদার হইয়া ! যদি সে হোটেল থোলে, যতীশ ভট্চাজ কে আনিয়া রাখিবে । বৃদ্ধ মামুষ, দুটি করিয়া খাইতে পারিবে আর কিছু হাত খরচ মিলিবে । ইহার বেশী তাহার আর কিসেরই বা দরকার । প্রতিদিনের মত আজও বেলা পড়িয়া আসিল । গত দু'বৎসর যেরূপ হইয়া আসিতেছে। সেই একই ঘোড়ানিম গাছ, সেই একই চূণীর খেয়াঘাট, পালেদের সেই একই কয়লার ডিপোতে মুটে ও সরকার বাবুর সঙ্গে ঝগড়া চলিতেছে—সবই পুরাতন । দিন যায়, কিন্তু তাহার সাধ পূর্ণ হইবার তো কোনো লক্ষণই দেখা যাইতেছে না। বরং দিন দিন আরও ক্রমে অবস্থা খারাপের দিকেই চলিয়াছে । সামান্য মাইনে হোটেলের—কি হইবে ইহাতে ? বাড়ীতে টেপিকে একখানা ভাল শখের কাপড় দেওয়া যায় না, পেট পুরিয়া থাইতে দেওয়া যায় না। টেপির মা গরীব ঘরেরর মেয়ে। যেমূন বাপের বাড়ীতে কখনও মুখের মুখ দেখে নাই, স্বামীর ঘরে আসিয়াও তাই। সংসারে গভীর খাটুনি খাটিয়া ছেলেমেয়ে মানুষ করিতেছে— মুখ ফুটিয়া কোনোদিন স্বামীর কাছে কোনো আদর-আবদার করে নাই—ছেড়া কাপড় সেলাই করিয়া পরিতেছে, আধপেট খাইয়া নিজে, ছেলেমেয়েদের জন্য দু-মুঠা বেশী ভাত জল দিয়া রাখিয়া দিতেছে হাড়িতে, তাহারা সকাল বেলা খাইবে । কখনো কোনোদিন সেজন্ত বিরক্তি প্রকাশ করে নাই, অদৃষ্টকে নিন্দ করে নাই।