পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Եr বিভূতি-রচনাবলী পদ্ম ঝি বলিল—ঝগড়া করেছিলে না তুমি ওই বাবুর সঙ্গে ? সে মুখোমুখি তক্‌কো কি ! বাৰু তো চড় মারবেনই ! আমি গিয়ে না পড়লে দিত কবিয়ে দু-চার স্বা। আগে কি বলেচে না বলেচে আমি তো শুনি নি, গিয়ে দেখি বাবু রেগে লাল হয়ে গিয়েচেন। ওর কি কাণ্ডজ্ঞান আছে ? তখনও সমানে ঝগড়া চালাচ্চে— বেচু চকত্তি বলিল—খদের যাই কেন বলুক না তাই শুনে যেতে হবে, এ তুমি বুড়ো হয়ে মরতে চল্পে, আজও শিখলে না তুমি ? —বাবু, আপনি শুনে বিচার করুন। ঝগড়া তো আমি করি নি—উনি বল্পেন ন’ট। বেজেচে, আমি বল্লাম সাড়ে-আটটা বেজেচে, এই উনি আমায় বল্লেন, আমি কি ঘড়ি দেখতে জানিনে ? পদ্ম ঝি বলিল—তোমার সব মিথ্যে কথা ঠাকুর । ও কথায় কখনো ভদ্র লোক চটে না। তুমি বেয়াদপের মত তক্‌কো করেচো তাই বাবু চটে গিয়েচেন । আমি গিয়ে স্বকৰ্ণে শুনিচি তুমি যা তা বলচে । অবগু এখানে পদ্ম ঝিয়ের উক্তির সত্যতা সম্বন্ধে কোন প্রশ্নই চলিতে পারে না, এ কথা হাজারি ভাল করিয়া জানিত। বেচু চকত্তি মহাশয় কাহারও কথা শুনিবেন না, পদ্ম কি যাহা বলিবে তাহাই ধ্রুব সত্য বলিয়া মানিয়া লইবেনই। সে অগত্যা চুপ করিয়া রহিল। বেচু চকত্তি বলিল—পচা মাছ কে এনেছিল ? হাজারি উত্তর দেবার পূর্বেই পদ্ম ঝি বলিল—ওই গিয়েছিল বাজারে। ওই এনেচে । হাজারি বিস্ময়ে কাঠ হইয়া গেল। কি সৰ্ব্বনেশে মিথ্যে কথা ! পদ্ম ঝি খুব ভাল করিয়াই জানে, কাল রাত্রে প্রায় দেড়পোয়। আন্দাজ পোনা মাছ উদ্ধৃত্ত হইলে, পদ্ম ঝি-ই তাহাকে বলিয়াছিল, মাছগুল ঢাকিয়া রাখিতে এবং পরদিন কড়া করিয়া আর একবার ভাজিয়া লইয়া মাছের ঝাল করিতে ; তাহা হইলে খরিদার টের পাইবে না যে মাছটা বাসি। বাসি মাছ ভাজা সে খরিদারকে দিতে যায় নাই, পদ্ম ঝি নিজেই ভাজা মাছ দিবার কথা বলিয়াছিল । কিন্তু এ সব কথা বেচু চক্কত্তিকে বলিয়া কোন লাভ নাই। বেচু চকত্তি বলিল—তোমার আট-আনা জরিমানা হোল। মাইনের সময় কাটা বাবে – RNS I হাজারি রান্নাঘরে ফিরিয়া আসিল—কিন্তু তাহার চোখ দিয়া যেন জল বাহির হইয়া আসিতে চাহিতেছিল, কি অসহ অবিচার ! সে বাজারে গিয়াছিল ইহা সত্য, মাছ কিনিয়াছিল তাহাও সত্য, কিন্তু সে মাছ পচা নয়, সে মাছ খরিদ্বারের পাতে দেওয়াই হয় নাই! অথচ পদ্ম ঝি দিব্য তাহার ঘাড়ে সব দোষ চাপাইয়া দিল, আর সেই মিথ্যা অপরাধে তাহার হইল छद्रियांनां । পদ্ম দিদি তাহার সঙ্গে যে কেন এমন করিয়া লাগে—কি করিয়াছে সে পদ্ম দিদির ? রতন ঠাকুর আজ নাই, খাটুনি সবই তাহার ওপর । আট-দশজন লোক ইতিমধ্যে টিকিট কিনিয়া খাবার ঘরে ঢুকিল, চাকরে জায়গা করিয়া ছিল। হাজারি তাড়াতাড়ি জালু ভাজিয়া